বেলপাহাড়ীর গান //বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস

🌳🌴🌲 বেলপাহাড়ীর গান🌲🌴🌳
October 18, 2022.

 অনেকদিন ধরেই অনামী নদী, অখ্যাত পাহাড়, অচেনা জঙ্গলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছিল । ইচ্ছে করছিল বিষাক্ত নগর সভ্যতার মুখোশ থেকে মুক্তি নিয়ে কিছুটা সময় প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে কাটিয়ে আসতে । অতিমারি পৃথীবিকে আক্রান্ত করার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা চলছিল বিধানের কাছে বেলপাহাড়ীতে আসার । হচ্ছিল না । এবারেও শেষ মুহূর্তে যাত্রা প্রায় ভঙ্গ হতেই চলেছিল  কিন্তু এক প্রকার মরিয়া হয়েই শ্রীযুক্ত পিনাকী সুকুল এবং ডক্টর কেশব চন্দ্র মন্ডলের সাথে বেরিয়ে পরা।
সূর্যী বেলপাহাড়ীর পাহাড়গুলোর আড়ালে হারিয়ে যাবার বেশ কিছুটা আগেই বন্ধু বিধানের রেস্তোরাঁ ' কাঁচা লঙ্কা ' র সামনে এসে বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম । অভিভূত হয়ে গেলাম ওর রেস্তোরাঁয় রবিবাসরীয় ভিড় দেখে । 
অতিথি নিবাসে এসে চোখে মুখে জল দিতে না দিতেই ' কাঁচা লঙ্কা ' থেকে ডাক এলো । দিনের বেলাতেও ' কাঁচা লঙ্কা ' র আলো-ছায়াময় রোমান্টিক পরিবেশে আবিষ্ট হলাম।  সবুজ শাল পাতায় সাজানো চারিধারে স্যালাড, লেবু । ভাতের ওপর কাঁচা গোল পেঁয়াজ এবং তার মধ্যিখানে আকাশ পানে চেয়ে থাকা কাঁচা লঙ্কার রোমান্টিক জুটি কে দেখে রোমাঞ্চ জাগে ।  এবারে বিধানের চোদ্দো পদের ব্যঞ্জন সাজিয়ে দেবার শৈল্পিক নৈপুণ্য সত্যি আশ্চর্য করার ।  ওর​ একেরপর এক  ব্যঞ্জন  সাজানো দেখে আমি একপ্রকার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরি -- কারণ না আমি ভোজন রসিক, না  ভোজন বিলাসী ।  মনে মনে বেশ শক্ত সঙ্কল্প নিয়ে নিলাম যে কাঁচা লঙ্কা থেকে লঙ্কা আচার সবটাই পাকস্থলীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করাবার আপ্রাণ চেষ্টা করবো এবং কাজটিতে মোটামুটি আমি সফল।
খাওয়া শেষেই বেরিয়ে পরা ঘাগরা জলধারার কাছে। সাল বনবিথি পেরিয়ে যখন  কালো কুচকুচে কুঞ্চিত পৌড়ের পাঁজর পেরিয়ে বয়ে চলা ঘাগরার কাছে পৌঁছাতে পারলাম ততক্ষণে সূর্য দেব লুকিয়ে গেছে ওপারের শালবনের আড়ালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধান চলে এলো মেয়ে ঋষিকাকে সঙগে নিয়ে। যুগ যুগ ধরে অটল ধৈর্য্যে ও নিবিড় দায়িত্ব নিয়ে শায়িত পাথরের ওপর ঋষিকার সপ্রতিভ পদচারণায় বুঝতে পারলাম এদের সাথে ওর পরিচয় গভীর।। পিনাকী দা, ঋষিকা, বিধান এবং আমি একটা অগভীর জায়গা দিয়ে পেরিয়ে গেলাম পাহাড়ি নদীটা। শালছায়ে পটহোলগুলো ঋষিকার খেলার সাথী এবং সেকথা সে নদীর মতোই কলকল করে জানিয়ে দিলো আমাদের কাছে।
ডাভ নদীর ঝর্না ধারার পাশে বেড়ে ওঠা ওয়ার্ডস ওয়ার্থের লুসিকে আমরা চাক্ষুষ করিনি কিন্তু ঘগরের জলপ্রপাতের ধারে বেড়ে ওঠা ঋষিদের দেশের ঋষিকাকে দেখলাম। 
শাল, পলাশ, মহুলের ছায়ে পাহাড় ঘেরা রাঙামাটির পথের ধারেই ওর পাঠশালা।  পাঠশালার শিক্ষকদের সাথে সাথে একেবেকে চলা চঞ্চলা তারাফেনী নদী, ঋজু শাল গাছের সবুজ সারল্য, ঘন সবুজ মহুলের গাম্ভীর্য, পলাশের প্রতিক্ষা, অরন্যে মর্মর ধ্বনি তোলা গীতিকবিতায় নূতনের আবাহনী -- ঋষিকাদের অতিরিক্ত মুক্ত পাঠশালার প্রাজ্ঞ পন্ডিত মশাই। 
দ্রুতগতির পৃথিবী  ততোধিক দ্রুত গতির পিতা মাতা, অভিভাবকদের সন্তানদের​ তুলনায় আপাতদৃষ্টিতে ওরা পিছনে পরা  । কিন্তু,  ঋষিকারা ধীর অথছ দৃঢ় অভ্রান্ত পদক্ষেপে পৃথিবীর গতিতেই লাল শালুকের বিল পেরিয়ে, পদ্ম পুকুরের ধার দিয়ে, ডানে বাঁয়ে শাল পলাশের মধ্যে দিয়ে পাহাড় ঘেরা পৃথিবীর পাঠশালায় পৌঁছে যেতে যেতে ও পাঠ নিতে​ নিতে একদিন লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে  ।

       ✍️🌲🌳 ওরফে বিদ্যুৎ🌴🌳✍️

Comments

Popular posts from this blog

বেলপাহাড়ীর ঘোরার জায়গা গুলোর লিস্ট

গাড়ি ভাড়া /ঝাড়গ্রাম - বেলপাহাড়ী ট্যুর

বেলপাহাড়ীর হোম স্টে ও রিসোর্ট নাম্বার@ বিচিত্র গুপ্ত