ঝাড়গ্রাম: দুর্গা পুজো ট্যুর প্ল্যান:২০২৪
ঝড়গ্রাম :ট্যুর প্ল্যান :দুর্গা পূজা ২০২৪
( ৪ রাত , ৫ দিন)
@ বিচিত্র গুপ্ত
চির সবুজ অরণ্যে ঘেরা দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম জেলা ঝাড়গ্রাম। শাল, মহুয়া, পলাশ, কেঁদ, ধ, চিহর, কুসুম ,পিয়াল গাছের বিচরণ ভূমি এই জেলা। জেলার পাথুরে লাল মোরাম বিছানো মাটি চিরে বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা, কাঁসাই , ডুলুং, তারাফেনী ইত্যাদি ঐতিহাসিক নদী। অবিভক্ত মেদিনীপুরের পাহাড় ডুংরি পরিপূর্ণ মহকুমা ঝাড়গ্রাম এখন স্বয়ং একটি জেলা। এই জেলাতেই রয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের প্রস্তর যুগের মানব বসতির নিদর্শন বুকে অসংখ্য পাহাড়ি গুহা।রয়েছে রাজবাড়ী ,প্রাচীন স্থাপত্য , মন্দির ।রয়েছে পাহাড়ী জলপ্রপাত । রয়েছে দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি। বিচিত্র রকমের কীটপতঙ্গ । সজারু, অজগর , হাতি, নেকড়ে ,ময়ূর ,শিয়াল , বন মোরগ ,কাঠ বিড়ালি, প্রজাপতি , বন শুয়োর প্রভৃতি প্রাণী কুল ।রয়েছে প্রাচীন জৈন তীর্থ ক্ষেত্র। রয়েছে অসংখ্য লোক বাদ্য যন্ত্র, ঝুমুর গান; লাঙরে,ভুয়াং ,পাতা, ছৌ, নাটুয়া,পাইক প্রভৃতি লোক নৃত্য । সাঁওতাল, ভূমিজ, শবর, মহালি, কোরা , মুন্ডা প্রভৃতি জনজাতি ও তাদের সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতি ।জীব বৈচিত্র্য এবং ভূমিরূপ গঠনের বৈচিত্র্যও এই জনপদকে এক কথায় সমৃদ্ধ করেছে । এই সবকিছুর আকর্ষণে বছর ভর অসংখ্য মানুষ আসেন ঝাড়গ্রাম জেলায়,ঝাড়গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এবং যারা এই দুর্গা পুজোর সময় এই জেলায় আসতে চাইছেন ,তাদের জন্যে ৪ রাত ৫ দিনের একটা সম্ভাব্য ট্যুর প্ল্যান উল্লেখ করে দেওয়া হলো ।আপনি আপনার শিডিউল অনুসারে প্রয়োজনে কাট ছাট করে নিতে পারেন ।এমন কি যে হোটেল/রিসোর্ট/ হোম স্টে তে থাকবেন সেখান থেকেও প্রয়োজনীয় গাইড পাবেন।এই লেখাতে একটি লিংক দেওয়া আছে ,সেখান থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার সকল হোম স্টে/রিসোর্ট/হোটেল এর তথ্য পাবেন,গাড়ি দরকার হলে তার তথ্যও পেয়ে যাবেন । ফটো তে একটি QR কোডও দেওয়া আছে ,সেটাও ক্লিক করে সোজা ওই লিংকে যাওয়া যাবে।
প্রথম দিন ( ঝাড়গ্রাম): ট্রেন কিম্বা বাসে,কিম্বা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে প্রথম দিন ঝাড়গ্রামে থাকুন। ঝাড়গ্রাম শহরে থেকে শহরের নিকটবর্তী যে সব জায়গা গুলো ১ দিনেই দেখে নিতে পারবেন তার তালিকা নিম্ন রূপ
১. কনক দুর্গা মন্দির ২. চিল্কিগড় রাজবাড়ী ৩. ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী ৪. সাবিত্রী মন্দির ৫. ট্রাইবাল মিউজিয়াম ৬. ঝাড়গ্রাম মিনি জু,৭. খোঁয়াব গা ৮. আমলা চটি ভেষজ উদ্যান ৯. কৃষ গার্ডেন ।
দ্বিতীয় দিন(গোপীবল্লভ পুর) :
দ্বিতীয় দিন ঘুরে আসতে পারেন নয়াগ্রাম গোপীবল্লভপুর । যে সব জায়গা গুলোতে যাবেন :
১. সুবর্ণরেখা নদী ২. হাতিবাড়ি ৩. ঝিল্লি জলাশয় ও পরিযায়ী পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৪. তপোবন ঋষি বাল্মীকির আশ্রম ক) মা সীতার আতুর ঘর খ) বাল্মীকি সমাধি স্থল গ) তপোবন ড্যাম ঘ) তিলক মাটির ঢিবি ঙ) সীতা নালা, মা সীতার স্নান স্থান চ) লব কুশের স্নান কুন্ড ( হলুদ ও কাজল জলের নালা) ছ) যজ্ঞ কুন্ড জ) আর্তেজিও কূপ ঞ) তপোবন জঙ্গল
৫. রামেশ্বরম মন্দির (৭০০ বছর এর প্রাচীন) ৬. তাম্র যুগের প্রাগৈতিহাসিক গুহা ( পাতিনা গ্রামের মাজনা নামক স্থানে ) ৭. জঙ্গল কন্যাসেতু ( এই রাজ্যের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু) এবং সুবর্ন রেখায় নৌকো বিহার
৮. শ্রীপত গোবিন্দজির মন্দির
৯. পায়রাভারী প্রাচীন শিব মন্দির ( গভীর জঙ্গলের মধ্যে) , কাশিয়া গ্রাম থেকে ৩ কিমি ভিতরের জঙ্গলে
১০. সহস্র লিংগ মন্দির ( সাত পৌটিয়া গ্রামে, খুব প্রাচীন)
১১. জামিরাপাল গড়বাড়ি ( জমিদার বাড়ি)
১২. চন্দ্র কেতু গড় ( রাজা চন্দ্র কেতুর রাজ প্রাসাদ) , চন্দ্ররেখা গ্রামে।
১৩. দোলগ্রাম গড় ( চদ্র কেতু রাজার আরেক টি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ)
১৪. শালগেরিয়া চার্চ ( প্রায় দ্বি শতাধিক বছরের প্রাচীন )
১৫. ডোকরা ভারত সেবাশ্রম সংঘের মন্দির
১৬. ৬০০ বছর প্রাচীন রাধা গোবিন্দ জিও মন্দির
১৭.কুঠিঘাট রাম কৃষ্ণ মিশন আশ্রম মন্দির
১৮. কুঠি ঘাট প্রাচীন কালি মন্দির( সুবর্ন রেখার তীরে) ১৯. কুঠি ঘাট নীল কুঠি ২০. ডুলুং নদীর তীরে ব্রাঘেশ্বর মন্দির
২১. বেলেবেরা রাজ বাড়ি
২২. চৌরেশ্বর শিব মন্দির
তৃতীয় দিন ( বেলপাহাড়ী - কাকড়াঝোর):
তৃতীয় দিন ঝাড়গ্রাম থেকে চেক আউট করে চলে আসবেন বেলপাহাড়ী। তৃতীয় দিন ঘুরে দেখে নিতে পারেন
১. লালজল গুহা ২. ময়ূর ঝর্না ৩. কাকড়াঝোর ৪. কেটকি ঝর্না ৫. ঢাঙি কুসুম ৬. রঙিন পাহাড় ( খাদান ডুংরি) ৭. চিতি পাহাড় ৮. চাতন ডুংরি আদিম মানুষের গুহা ৯. শ্বেত পাথরের পাহাড় ( হাঁসা ডুংরি)
চতুর্থ দিন : চতুর্থ দিন ঘুরবেন
১.কুলডিহা ভিউ পয়েন্ট ২.খাঁদারাণী লেক ৩. গাডরাসিনী পাহাড় এবং ব্রহ্মর্ষী সত্যানন্দ সন্যাস আশ্রম
৪. উখুলডোবা জঙ্গল ট্রেক ( পায়ে হেঁটে )
৫. তুলসীবনী সরোবর
৬. ডোমগড় গ্রামে বাঘগুহা / আদিম মানুষের গুহা
৬. ঘাঘরা জল প্রপাত
৭. তারাফেনী ড্যাম
পঞ্চম দিন : ফিরে যাওয়ার দিন। এই দিন দেখে নিতে পারেন
১. কানাইসর পাহাড়
২. গজডুংরি
৩. শিলদা রাজবাড়ী , রাস মঞ্চ , আবাল গঞ্জ নাথ শিব মন্দির
৪. ওরগন্দা বাবা ভৈরব থান
৫. ব্রিটিশ দের রেখে যাওয়া নীল কারখানা , নীল কুঠি ( বেল পাহাড়ী)
অন্যান্য :
১.প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা যেখানেই থাকুন না কেন , পার্শ্ববর্তী গ্রামের গ্রামীণ দুর্গা পুজো দেখতে যেতে পারেন। শহরের আড়ম্বর হয় তো সব জায়গায় পাবেন না, কিন্তু গ্রামীণ আন্তরিকতা পাবেন প্রতিটি পুজো মণ্ডপে। যে হোম স্টে তে থাকবেন তাদের কাছ থেকেই কোথায় কোথায় যেতে পারেন ,তার গাইড পাবেন।
২. প্রয়োজন মত আপনি বেলপাহাড়ী থাকার সময় আপনার ট্যুর প্ল্যান পরিবর্তন করে ঘাটশিলা( ৫৪ কিমি) ঘুরে আসতে পারেন। কিম্বা ঘুরে আসতে পারেন ঝিলিমিলি( ২৭ কিমি) ও মুকুটমণিপুর( ৫৩ কিমি)।
২. রুম বুকিং কিম্বা গাড়ি বুকিং সংক্রান্ত সকল তথ্যের জন্যে আপনি এই blog এ ক্লিক করে সব তথ্য পেতে পারেন।
https://belpahari-jhargram-tourism.blogspot.com/?m=1
৩. আরো তথ্য বা জিজ্ঞাস্য থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন
ক) মধুসূদন কর্মকার ( প্রেসিডেন্ট,ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন ) : +919800635760
খ) শিবাসিষ চ্যাটার্জি ( সম্পাদক,ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন) :9547668966
গ) বিধান দেবনাথ ( বেলপাহাড়ী ট্যুরিজম এসোসিয়েশন ) : 8945876719
ঘ) প্রণব মাহাতো ( গোপীবল্লভপুর - নয়াগ্রাম) :+919641937200
ঙ ) পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর ( ঝাড়গ্রাম) :9147065770
প্রয়োজনে ঝাড়গ্রাম ভ্রমণ সংক্রান্ত একাধিক ইউটিউব ভিডিও আছে ,সেই গুলো দেখে নিতে পারেন। দেখে নিজের মত প্ল্যান করতে পারেন ।
© বিধান দেবনাথ
Comments