অফবিট বেলপাহাড়ী, পর্ব ১

অফবিট বেলপাহাড়ী 
( পর্ব - ১)
@ বিচিত্র গুপ্ত

না,আজ আর চিরপরিচিত বেলপাহাড়ীর পছন্দের ঘোরার জায়গাগুলো সম্পর্কে কিছু বলব না।আজ কিছু অরবিট ,রোমাঞ্চকর জায়গা সম্পর্কে আলোকপাত করবো।যদিও প্রকৃত অর্থে বেলপাহাড়ী অঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম,জঙ্গল,জলাশয় অসম্ভব বর্ণনাতীত সৌন্দর্যে ভরপুর, তবুও এখানে আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভালো লাগা কয়েকটি  জায়গা সম্পর্কে বলবো। নিজের মত ,নিজের ভালো লাগা অনুসারে এক অন্যরকম বেলপাহাড়ী উপভোগ করতে এই সব জায়গা গুলো যেতেই পারেন।


১. অদলচুয়া ভিউ পয়েন্ট: সকলের পক্ষে ট্রেক করে পাহাড়ের উপরে উঠে চারদিকের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করা সম্ভব হয় না।  সুতরাং উপায় কি? এমন কোন ভিউ পয়েন্ট কি নেই ,যেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি পাহাড় জঙ্গলের অসাধারন ভিউ দেখা যাবে ,অথচ ট্রেক করে পাহাড়ে উঠতে হবে না? হ্যাঁ আছে । বেলপাহাড়ী ইন্দিরা চক থেকে কাকড়াঝর রোডে মাত্র ৯.৩ কিমি দূরে খট্টাধরা CRPF ক্যাম্প থেকে কটুচুয়া - ঠাকুরানপাহাড়ী যাওয়ার পাকা রাস্তায় ৩০০ মিটার মত গেলেই এই ভিউ পয়েন্ট এর অবস্থান । কটুচুয়া ঠাকুরান পাহাড়ী রাস্তায় ঢুকে ১০০ মিটার গেলে রাস্তা ডান দিকে বেঁকে গেছে ।তারপর ২০০ মিটার গিয়ে বাম দিকে বেঁকে সোজা ঢাল বরাবর নেমে গেছে। প্রথম বাঁক শুরু হতেই গাড়ি থেকে নেমে চার পাশের পাহাড়ি ভিউ দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বাঁক পর্যন্ত ( ৩০০ মিটার,সমতল জায়গা ) হেঁটে যেতে হবে। পাহাড়ে না উঠেও এখানে পাহাড় চূড়োয় উঠে চারদিকে যেমন দৃশ্য দেখা যায় ঠিক তেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়।
নিচে গুগল লোকেশন দেওয়া হলো:

https://maps.app.goo.gl/E2hEeMMsC9XiXcpp6 


২.ছুপাঘাটি ভ্যালী : লুকা ছুপি খেলার মত অনবদ্য একটা ভ্যালী। দুই পাশে উচু পাহাড়ের শ্রেণী ।মাঝখান দিয়ে কালো সাপের মত এঁকে বেঁকে চলে গেছে একটা কালো পিচ রাস্তা । পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা নদী। ডুলুং এর একটা উপনদী । অদলচুয়া ভিউ পয়েন্ট থেকে ঠাকুরান পাহাড়ীর দিকে ৫০০/৬০০ মিটার গেলে চারমাথা একটা মোড় রয়েছে। ডান দিকে লাল মোরাম রাস্তা চলে গেছে মাজগেরিয়া গ্রাম হয়ে চিরুগোড়া, চিড়াকুটি, ঢাঙিকুসুম গ্রামের দিকে। বাম দিকে মূল পাকা রাস্তা বেঁকে ডুলুংডিহা ( এই গ্রাম থেকে ডুলুং নদী উৎপন্ন হয়েছে ) , ঠাকুরানপাহাড়ী ,শিমুল পাল গ্রামে চলে গেছে।সোজা যে রাস্তা ,সেই রাস্তা ধরে চলে যেতে হবে।কটুচুয়া গ্রাম (একটা সুন্দর পাহাড়ী গ্রাম,এই গ্রামের পাশেই রয়েছে খাদান ডুংরি,যেটি রঙিন পাহাড় নামে পরিচিতি লাভ করেছে)  পাড় হয়ে ৩ কিমি চলে যান। দেখবেন দুই পাশে উচু পাহাড় শ্রেণী। অপরূপ পাহাড়ী ভ্যালি। ওখানে প্রাকৃতিক শোভায় নিমগ্ন হয়ে পাকা রাস্তা বরাবর এগিয়ে দুইবার নদী পাড় হয়ে ( কালভার্ট তৈরি হয়ে গেছে) একটা গিরিপথ পাড় করে পৌঁছে যাবেন ঠাকুরানপাহাড়ী প্রাচীন আম বাগান ও ফুটবল গ্রাউন্ডে। এই মাঠে প্রতিবছর ১ লা মাঘ বসে টুসু মেলা।
গুগল লিংক :
https://maps.app.goo.gl/DuLUcJ4x9627i93T9


৩.ধোবাকাঁচা - বিরদাগড় ফুটবল মাঠ:  মালভূমির টেবিল ল্যান্ড এর কথা আমরা জানি । এখানে রয়েছে একটি সুবিধাল ফুটবল মাঠ। এক দিকে একটি ডুংরি । আর তিন দিক ঢালু হয়ে নেমে গেছে। এখানে দাড়িয়ে অদলচুয়া, চিড়াকুটি,চিরুগোড়া, বাঁশ পাহাড়ী, সিঙ্গাডুবা , রিমরাডাঙ্গা  পর্যন্ত অসাধারন  ভ্যালী ও বহুদূর পর্যন্ত গড়গড়ি ডুংরি, লকাইসিনি পাহাড় , ভৈর পাহাড়, ধ’ ডাঙর পাহাড়, চেরাং পাহাড় দেখা যায়। চিড়াকুটি হাটচালি থেকে ঢাঙিকুসুম যাওয়ার পথে ,যে মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরে ঢাঙিকুসুম যেতে হয়, ঠিক সেই মোড়ের বাম দিকে ২০০ মিটার হাটা পথ কিম্বা শবরপাড়া র মধ্যে দিয়ে ২০০ মিটার গাড়ি নিয়ে গেলেই এই স্থানের অবস্থান। 

গুগল লিংক :

https://maps.app.goo.gl/aconztytwMGNmw8DA 

৪.ডোমগড় বাঘগুহা  : কথিত আছে উড়িষ্যার এক সামন্ত রাজা মেদিনী মল্লোরায় ঝাটিবনী ( অধুনা শিলদা ) পরগনার রাজা বিজয় সিংহ কে ১৫২৪ সালে পরাজিত করে এই অঞ্চল দখল করেছিল। এর আগে বিজয় সিংহ যে ডোম রাজাকে পরাজিত করেছিলেন সেই রাজার গড় বা রাজধানী ছিল আজকের ডোমগড় গ্রামটি। বেলপাহাড়ী ইন্দিরা চক  থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত । ইন্দিরা চক থেকে ৫ নং রাজ্য সড়ক বরাবর এগিয়ে গেলে হদরা মোড়। এখান থেকে বাম দিকের পাকা রাস্তা ধরে গেলে আগুইবিল গাডরাসিনী যাওয়া যায় ।এই রাস্তা বরাবর ২০০ মিটার মত গেলে বাম দিকে আরো একটি রাস্তা গেছে যেটি ডোমগড় গ্রাম হয়ে তুলসীবনী গ্রাম ও তুলসীবনী সরোবরের দিকে গেছে ।
এই তুলসীবনী ডোমগড় রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে তিন নম্বর গ্রাম ,যে গ্রাম টি চাতনপাহাড় এর উত্তর ঢালে অবস্থিত, সেই গ্রামে ঢুকে যে কোন মানুষকে বললেই দেখিয়ে দেবে “ বাঘ গুহা “ ওঠার পথ। আজ থেকে প্রায় ৪০/৫০ বছর আগে এখানে বাঘ থাকতো।সেই থেকে এটির নাম বাঘ গুহা । আসলে এটি প্রস্তর যুগে বসবাস কারী মানুষের পরিত্যক্ত গুহা। 

গুহাটির গুগল লিংক 

:https://maps.app.goo.gl/YR7SbBfczGFoApzH8


৫. গলাডুংরি  ভ্যালী ও সানসেট ভিউ পয়েন্ট :
পাহাড় জঙ্গল ঘেরা বেলপাহাড়ী এসে কোন পাহাড়ী ভ্যালি দেখবো না, তা কখনও হয় না কি!অরুণাচল প্রদেশের জিরো ভ্যালী যেমন দেখতে ঠিক তেমন এক অপূর্ব ভ্যালী দেখতে হলে অবশ্যই এখানে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে এই ভ্যালীর  এক প্রান্তে অবস্থিত ডুলুংডিহা গ্রাম ,যে গ্রাম থেকে উৎপন্ন হয়েছে ডুলুং নদী । গলাডুংরি  চিতি পাহাড়ের কাছেই অবস্থিত।BRWS এর অফিস বাড়ির ঠিক পিছনেই এই নাতিউচ্চ ডুংরির অবস্থান।বেলপাহাড়ী থেকে কাকড়াঝর রোডে ৪ কিমি মত গেলে বদাডিহি দুর্জন সিং মোড়।বাম দিকে যে রাস্তা মাছকান্দা,শিমুল পাল গ্রামের দিকে গেছে ,সেই পথে ২ কিমি গেলেই এই গলা ডুংরি।গাড়ি রেখে এই ডুংরির টপে পৌঁছে গেলেই উত্তর পূর্ব কোন বিস্তৃত পাহাড়ী উপত্যকা। দু পাশে সারি বদ্ধ পাহাড় শ্রেণী,মাঝখানে ভ্যালী। এখান  থেকে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখার মজায় আলাদা।

গুগল লিংক 
:https://maps.app.goo.gl/jBuGkK73G197KseS9 

( ক্রমশ)
© বিধান দেবনাথ/ বেলপাহাড়ী 

Comments

Popular posts from this blog

বেলপাহাড়ীর ঘোরার জায়গা গুলোর লিস্ট

গাড়ি ভাড়া /ঝাড়গ্রাম - বেলপাহাড়ী ট্যুর

বেলপাহাড়ীর হোম স্টে ও রিসোর্ট নাম্বার@ বিচিত্র গুপ্ত