ঝারগ্রাম বেলপাহাড়ী ভ্রমণ কথা

ঝাড়গ্রাম- কোঁকড়াঝার আর এদিক ওদিক

সৃজিতা দ 

কোথাও একটা যেতে হবে, সেটা যে কোনোদিন হতে পারে, যে কোনও জায়গা হতে পারে। এইরকম চিন্তা ভাবনা থেকে পাওয়া গেল ঝাড়গ্রামের খোঁজ। ৬ই ফেব্রুয়ারী যাওয়া, ৮ই ফেব্রুয়ারী ফিরে আসা। 

৬ই ফেব্রুয়ারী
সকাল ৬:৩৫ এ হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরে ৮:৩০-৪৫ নাগাদ নামলাম ঝাড়্গ্রাম ষ্টেশন। ওখান থেকেই গাড়ি পিক আপ করল। গাড়িতে বসেই স্যান্ডউইচ দিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম। আমরা ভেবেছিলাম আগে বুঝি হোটেল যাব, ফ্রেশ হয়ে বেরবো। কিন্তু, ড্রাইভার কাঞ্চনদা বলল না, সেটা করলে অনেকখানি রাস্তা শুধু শুধু আপ- ডাউন করতে হবে, কারণ আমরা থাকবো ঝাড়গ্রামে নয়, কোঁকড়াঝার গেস্ট হাউসে। 

প্রথম গেলাম চিল্কিগড় কনক দুর্গা মন্দির। আমরা তিনজনের কেউই খুব বড় ঈশ্বরভক্ত নই। তাই প্রথমে ভাবছিলাম “আবার মন্দির!” কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে বাঁধানো রাস্তা র দুপাশে বড় বড় গাছ, হাল্কা জঙ্গল, পাতার আওয়াজ, বুনো গন্ধ পুরো মেজাজটাই পাল্টে দিল। মূল মন্দিরটা বেশ খানিকটা এরকম রাস্তা দিয়ে হেঁটে তারপর। নতুন বানানো মন্দির। ভিতরে ছোট্ট প্রতিমা। পাশেই রয়েছে প্রাচীন মন্দিরটা। ভগ্নপ্রায়, কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি এখনও। হয়ত কম ঈশ্বরভক্ত বলেই, আমার এই পুরনো মন্দিরটা বেশী ভালো লাগলো। ওটার ছবিই তুললাম বেশি। 

এদিক ওদিক তাকাতে দেখি পাশে সিঁড়ি, আর তার পাশে সাইনবোর্ডে লেখা “ডুলুং নদী” তীর চিহ্ন সহ। একটু একটু করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এগোতেই, সত্যি মন ভরে গেল। এখন অসময় তাই জল কম, কিন্তু তাও একেবারে মরা নদী নয়। মিষ্টি ঠাণ্ডা হাওয়া, কুলকুল আওয়াজ, এখানে ওখানে কেউ কাপড় কাচছে, কেউ স্নান করছে, এক্কেবারে ছবির মত সুন্দর। প্রথম জায়গাতে এসেই মনে হল, আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, এখানেই বসে থাকি। 

ওখান থেকে বেরিয়ে এবার কাঞ্চনদা নিয়ে গেল চিল্কিগড় রাজবাড়ি। এখানে এখন জামবনি ICDS প্রকল্পের অফিস। তাই ভিতরে ঢোকার গল্প নেই। বাইরে থেকে দেখা যায় রাধাকৃষ্ণ মন্দির। বাড়ির যেটুকু বাইরে, তার সবটাই ঘুরে দেখতে পারেন, কিন্তু সেগুলো ঠিক কি, মানে কোনটা কিসের জন্য তৈরি হয়েছিল, সেসব বলে দেওয়ার লোক নেই। কালের গর্ভে সবই হারায়- এই পুরনো রাজবাড়ি গুলো দেখলে এই কথাই মনে হয়। বংশধররা কেউ আছেন হয়তো, কিন্তু তারাও এই বাড়ি maintain করা বা একে আলাদা করে টুরিস্ট স্পট করার জন্য উৎসাহী বলে মনে হয় না। যা আছে, থাকুক। যদি ভেঙ্গে পড়ে, পড়ুক। 

এবার যাব ঘাগরা ফলস। কাঞ্চনদা প্রথমেই বলে দিল, জল কিন্তু পাওয়া যাবে না বেশি, বর্ষা না হলে এগুলোর আসল রূপ দেখা যাবে না। কিন্তু সেটা ছাড়াও, দেখতে সুন্দর বৈকি। ঘাগরা ফলসে খুব বড় বড় পাথর, জল আছে, আওয়াজ পাওয়া যাবে, কিন্তু দেখা যাবে না। ওই পাথর চড়ে চড়ে একটু উঠে, একটু নেমে, একটু এগিয়ে, একটু ঝুঁকে জল দেখতে পেয়েছি। তবে এই কম জলেই যা আওয়াজ, বর্ষাকালে ভরপুর হলে না জানি কি তার চেহারা! 

এবার গন্তব্য কেটকী ঝর্ণা। সারা রাস্তাই মোটামুটি কমবেশী জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। আর যখন গ্রামের লোকালয়ে এসে পড়বেন, তখন দেখবেন নিকনো উঠোন, দেওয়ালের গায়ে রঙিন মাটি দিয়ে নকশা করা, উঠোনে ঘুরে বেড়ানো হাঁস, গরু, ছাগল, নাকে পোটলা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চা ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে গ্রামের নাম কেটকী। আর ঝর্ণা নেই কোনও, আছে একটা হ্রদ। ঠিক যেভাবে ডুলুং দেখে মন শান্তিতে ভরে গেছিল, এই কেটকী লেক দেখেও তাই। গাড়ি দাঁড়ায় একটু দূরে, সেখান থেকে একটু হেঁটে লেকে নামতে পারবেন। ওই রাতজাগা আর ভোরের ট্রেনজার্নির পর প্যান্ট গুটিয়ে যখন লেকের জলে পা ভিজিয়ে দাঁড়ালাম, মনে হল সব ক্লান্তি ওই জলের ছোঁয়ায় দূর হয়ে গেল। “গুটিছয় পায়রা ও গুটিকত হাঁস রে” দেখা দেবে। পাড় থেকে আরেকটু এগিয়ে ঘোলা জলটুকু সরিয়ে এক আঁজলা জল নিয়ে মুখে ছেটাতেই মনে হল গামছা নিয়ে নেমে পড়ি। সমস্ত শারীরিক আর মানসিক ক্লান্তির ওষুধ লুকিয়ে ছিল এইটুকুতেই যেন। 

ব্যাস, এবার যাব সোজা কোঁকড়াঝার গেস্ট হাউসে। আচ্ছা, এর মাঝে পড়েছে বেলপাহাড়ি টাউন। দোকানপাট, বাজার, মানুষ সব নিয়ে জমজমাট জায়গা। দুপাশে জঙ্গল নিয়ে চলতে চলতে পৌঁছালাম গেস্ট হাউসে। সরকারি গেস্ট হাউস, এখন কেউ লিজ নিয়ে চালান। বড় বড় ঘর। আমরা তিনজনের জন্য একটা 4-bed room পেলাম। আসে পাশে কিচ্ছু নেই। শুধু আরেকটু উপরে আছে CRPF –এর ক্যাম্প। স্নান সেরে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। বাড়াবাড়ি নেই, আবার অভাবও নেই। আমরা কেউই বেড়াতে গিয়ে বাড়ির খাবার খুঁজি না, তাই যেখানে যা পাই, তাতেই আমাদের দিব্বি চলে যায়। দুপুরে পেলাম ভাত, আলু পোস্ত, পাঁচমিশালি তরকারি, ডাল, আলুভাজা, বড় এক পিস মাছ, চাটনি। খেয়ে উঠে এবার শরীর বিছানায় পপাত চ এক্কেবারে।
৫টা নাগাদ বাইরে থেকে ডাক শুনে বেরিয়ে এসে শুনি, ওই ড্রাইভার কাঞ্চনদা গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যাবে বেলপাহাড়িতে। কাল সকালে আবার ৯:৩০-র মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু আমাদের বিকালে কাছেই একটা নদী দেখাতে নিয়ে যাবে, বেশী না, ১ কিমি মত। তাই গেলাম। নদীর নাম মারো। পাশেই আছে একটা ভৈরব মন্দির। এটা আসলে ঝাড়খণ্ড বর্ডার। এপাশে ঝাড়গ্রাম, ওপাশে ঝাড়খণ্ড। বিকেল টুকু বসে, হাওয়া খেয়ে কেটে যায়। বলে রাখি, এখানে কিন্তু আসে পাশে কিচ্ছু নেই, না দোকান, না পাট। শুধু পাতা পড়ার আওয়াজ। আর, কোনও ফোনের কোনও নেটওয়ার্ক নেই। 

এমন রাত কোনোদিন দেখিনি। একদিন আগেই বোধহয় পূর্ণিমা ছিল। শালপাতার জঙ্গল ভেসে যাচ্ছে জ্যোৎস্নায়। “বনজ্যোৎস্নায় সবুজ অন্ধকারে।“ গাছের মাথায় চাঁদের আলো পড়ে মোহ, মায়া, রহস্যাবৃত এক পরিস্থিতি তৈরি করে। গেস্ট হাউসের রঞ্জিতকে বলে বাইরের সব আলো নিভিয়ে ঘুরে বেড়ালাম খানিকক্ষণ। ভালোলাগায় হারিয়ে যেতে, মরে যেতে ইচ্ছা করে, জানেন। ৯টা মানেই অনেক রাত। রাতের খাবার রুটি, মাংস। খেয়ে দেয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে চুপচাপ বাইরে পাতা পড়ার, রাতজাগা পাখির ডাক, শুনতে শুনতে ঘুম। এত নিস্তব্ধ পরিবেশ যে হতে পারে, তা আমাদের এই শহুরে কানে যেখানে সবসময় কোনও না কোনরকম আওয়াজ লেগেই আছে, খুব আরাম দেয়। 

এই গেস্ট হাউসে সকাল বিকেল আপনার পায়ের উপর পড়ে, লুটিয়ে, খেলে, দৌড়ে একজন ব্যস্ত করে তুলবেন। চারপেয়ে প্রাণী। নাম জানিনা। আমি বিকেলে ফিরে এসে, সকালে উঠে এর সাথে প্রচুর খেলেছি, খাইয়েছি। রোগা বাচ্চা, কিন্তু এনার্জি ভরপুর। 

৭ই ফেব্রুয়ারী
আজকে প্রথম যাব লালজল পাহাড়। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে টানা পিচের রাস্তা। ছবির মত। সাথে ড্রাইভার কাঞ্চনদার commentry। কোন জঙ্গলে কিরকম মাওবাদী থাকত, এখন আছে কিনা, কোথায় কোন গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইত্যাদি চলতে থাকে। মাঝে মাঝে গা শিরশিরিয়ে ওঠে বৈকি। লালজল পাহাড়ে বেশ খানিকটা উঠে একটা গুহা পাওয়া যাবে। পায়ের জোর থাকলে উঠবেন। আর অবশ্যই চটি, বুট, স্লিপার জাতীয় জুতো পরবেন না। এখানে মাঠের মধ্যে বসে কয়েকজন গুড় জ্বাল দিচ্ছিলেন। তাদের থেকে প্রচুর গুড় কেনা হল। পাটালি, পাতলা গুড় সব মিলিয়ে বেশ অনেক।

এর পর গাড়ি চলল খাঁদারাণী লেক। অন্য লেকের মতই জল এখন খুব বেশি নেই। লেকের রাস্তার পাশে কয়েকটা খড়ের ছাউনি দেওয়া দোকান। সেখানে চা, ছোলামাখা পাওয়া যায়। লেকের ঠাণ্ডা হাওয়ায়, খড়ের চালের তলায় শরীর জুড়িয়ে যায়। গরমও আছে বেশ। কিন্তু ওই লেবু দিয়ে ভালো করে মাখা ছোলা খেয়ে একদম চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। এখানে একটা watch tower আছে, ঠিক মনে পড়ছে না, তবে বোধ হয় প্রায় ৭৫-৮০টা সিঁড়ি। প্রাণজুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করে এবার পরের location- এ যাওয়ার পালা।

এবার যাচ্ছি বেলপাহাড়ি হয়ে কেন্দাপাড়া শ্বেত পাথরের পাহাড়। Marble rock-এর পাহাড়। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে শ্বেত পাথরের পাহাড়। কোনটা ছোট, কোনটা এখনও খোঁড়া খুঁড়ি হয়নি। এখানেও পাহাড় গুলো চড়া যায়। তবে ওই, পায়ে জোর থাকলে উঠবেন। কারণ কোনও পাকা রাস্তা কিন্তু নেই। ঝোপ, জঙ্গল, পাথুরে রাস্তা, এই সব মাড়িয়ে, সরিয়ে এভাবেই উঠতে হবে। দূরে দেখা যাবে পুরো বেলপাহাড়ি পাহাড়ের range-টা। তার ওপারে ঝাড়খণ্ড।

এর পর দুপুরে খেতে যেতে হবে বেলপাহাড়ি চৌমাথায় কাঁচা লঙ্কা রেস্টুরেন্ট। সারা বেলপাহাড়ি মায় ঝাড়গ্রামে ভালো বিখ্যাত এই family restaurant। দাম এবং মান, দুটোই এখানে যথাযথ। 

খাওয়া সেরে এবার যাব ঢাঙ্গিকুসুম। এখানে যাওয়ার পথে এক জায়গা থেকে কিছু কেনাকাটি করা হল। অরণ্য শিল্প বলে পোস্টার দেখেছিলাম সেই চিল্কিগড়ে। কিন্তু সেখানে তাদের দোকান নেই। কাঞ্চনদাই বলেছিল, বেলপাহাড়ি থেকে ঢাঙ্গিকুসুম যাওয়ার সময় এই জায়গা পড়বে, ওখান থেকে কিনতে পারব। হাতের কাজের জিনিস, ঘাসের টেবল ম্যাট, পাতার ব্যাগ, ইত্যাদি কেনা হল। পাশে টিউব ওয়েলের থেকে ৪ বোতল জল ভরলাম। উফ, কি ঠাণ্ডা, কি আরাম! ওই দোকানের সাথেই ওদের ঘর। গাছের তলায় খাটিয়া পাতা। লোভ সামলাতে না পেরে যতক্ষণ না কেনাকাটি শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ গড়িয়ে নিয়েছি। ভর দুপুরের ভালো গরম, সাথে আমার মাইগ্রেনের ব্যথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আগের রাত থেকে। ওই খানে শুয়ে গাছের পাতার হাওয়ায় মনে হল ঘুম নেমে আসবে চোখে, শান্তির ঘুম।
কিন্তু আমরা তো tourist, আমরা তো traveller নই। তাই যেদিন যেখানে যেমন ইচ্ছা থাকব, যেখানে যাওয়ার সেখানে দুদিন পরে যাব, এমন তো আমরা করতে পারি না। তাই জোর করে আরামের শোওয়া ছেড়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। 

ঢাঙ্গিকুসুম পৌঁছানোর আগে কাঞ্চনদা গাড়ি এনে দাঁড় করালো একটা পাহাড়ের তলায়। নাম চিতি পাহাড়। আমরা গড়রাসিনি পাহাড় যাইনি। কারণ ওটা প্রায় 400 মিটার উঠতে হবে হেঁটে। শরীরে পারব কিনা সন্দেহ ছিল কারণ আমি মাইগ্রেনে তখন কাবু। এর বদলে compensation হিসেবে তাই এই পাহাড়। গাছে ভরা, মাটিতে পাতায় ঢাকা। কোনও specific রাস্তা নেই। খানিক উঠে আমরা বললাম, এইটুকুই থাক। কিন্তু কাঞ্চনদা জোর করল আরেকটু উপরে যাওয়ার জন্য। গেলাম আর বুঝলাম কেন জোর করল কাঞ্চনদা আর কেন না আসাটা ভুল হত। লোকাল মানুষের কথা শোনা উচিত। অসাধারণ দৃশ্য উপর থেকে। যেদিকে তাকাই সবুজ জঙ্গল, পাহাড়, বেল পাহাড়ি রেঞ্জ আর সাথে জঙ্গলের মধ্যে হাওয়া দেওয়ার শন শন শব্দ। এ শব্দ, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। এর মধ্যে কাঞ্চনদা চিনিয়ে দিল মহুয়া গাছ, বাঁদর পিছলা গাছ, কুসুম গাছ, এমনি কত কি। 

ঢাঙ্গিকুসুমও একটা ঝর্ণা বা Falls। গাড়ি থেকে নেমে বেশ অনেকটা উঠে, আবার নেমে, কিছুটা সোজা হেঁটে Falls এর কাছে পৌঁছালাম। আগের কথার পুনরাবৃত্তি করতে হয়, বর্ষা নয় তাই জল নেই। শনি আর রবিবার এখানে অস্থায়ী দোকান বসে পাথরের জিনিস ইত্যাদি নিয়ে। জল নেই ঠিকই, কিন্তু রূপ আছে। রূপেই ভোলাবে, ভালবাসায়ও ভোলাবে।

এখান থেকে ফেরার সময় পাওয়া গেল একটা হাট। শেষ বিকেলে গুটিকয় জিনিস তখন পড়ে আছে। তবু তার দাম শুনেই আমাদের শহুরে বিলাপ শুরু হওয়ার উপক্রম। ইয়াব্বড় বাঁধাকপি ৫ টাকা, টম্যাটো, কিছু শাক সবই এরকম দামে বিক্রি হচ্ছে। আমি আবার যেখানেই যাই ফুচকা খাই। এখানেও দেখতে পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। সবুজ শালপাতা ভাঁজ করে তার মধ্যে টপাটপ গোল গোল ফুচকা পড়তে লাগল। আলুমাখার মধ্যে আবার নিমকি, চানাচুর মেশানো। ১০ টাকায় ৭ খানা। এসব মিটিয়ে আবার গাড়ি চড়লাম এবার ফিরব বলে।
মাঝরাস্তায় কাঞ্চনদা গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলল, “এই পাথরগুলোর গায়ে দেখো, এই গুলোই ওই বাড়ির দেওয়ালে লাগায়।“ নেমে দেখি, ওমা সত্যি। পাথরের গায়ে রঙিন ধুলোর মত গুঁড়ো। একটু হাত লাগলেই হাতে আবীরের মত রং হয়। লাল, হলুদ, সাদা রঙের বাহার কত! কাঞ্চনদা বেলপাহাড়ির ছেলে। তাই এমন টুকটাক জিনিস, জায়গা চিনে নিতে শেখায় আমাদের। 

ফেরার পথে “কেকাবনি” বলে একটি নতুন রিসোর্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আবার গাড়ি থামল। এবার ময়ূর দেখা যাবে। যদিও গেস্ট হাউসেও জঙ্গল থেকে ময়ূরের ডাক পেয়েছি। এই কেকাবনির রাস্তায় গাছের উপর ময়ূর বসে ছিল। এরা নাকি খাবার দিলে নেমে এসে খায়। তবে আমরা ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে গেছিল। তাই অন্ধকারে আর এলো না, যদিও আমরা নীচ থেকে দেখতে পাচ্ছি গাছের উপর ইয়ায়া বড় পেখম নিয়ে বসে আছে।
সন্ধেবেলা ফিরে চা পকোড়া খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন। রাত্রের খাবারের কথা জানতে এসে আমাদের ঘুম ভাঙল। এদিন পেলাম রুটি আর দেশী মুরগীর মাংস। খুব খুব ভালো রান্না। পরদিন সকাল ৭:৩৭- এ ট্রেন, ষ্টীল এক্সপ্রেস। আমাদের গেস্ট হাউস থেকে বেরোতে হবে ভোর ৫টায়। রাত করে ঘুমানোর প্রশ্ন নেই। আবার সেই নিঝুম চারিদিক।

 কয়েকটা কথাঃ
আমরা পুরো গেস্ট হাউস ফাঁকা পেয়েছি কারণ আমরা সোমবার গেছি, বুধবার ফিরেছি। Weekday বলে এবং কোনও ছুটির দিন নয় বলেই কোনও reservation ছিল না।

একই কথা প্রত্যেকটা স্পটের ক্ষেত্রেও। সবকটা জায়গাতেই আমরাই শুধুমাত্র ঘুরেছি, অন্য কেউ নেই। একটাই কারণ, weekday। 

আমরা একজনের মাধ্যমে গেছিলাম। তিনি সুদীপ্তা দাসগুপ্ত। ফোন নং 8017820182 । অত্যন্ত ভদ্র, ভীষণ ভালো communicate করেন, নিজে এসেছিলেন স্টেশন থেকে receive করতে। সারা ট্যুরে বারবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন অসুবিধা হচ্ছে কিনা।

কাঞ্চনদা নিজেও ট্যুর করায়। ফোন নম্বর দিয়ে কার্ডের ছবি দিলাম। ভীষণ ভালো ছেলে। ধৈর্য আছে। বাজে ড্রাইভ করে না, গালাগালি নেই রাস্তায় কোনও। গল্প করে সারা রাস্তা। আমি বলব আপনারা ডিরেক্ট ওর সাথেই যোগাযোগ করতে পারেন। খুব ভালো ঘুরবেন।

Comments

Popular posts from this blog

বেলপাহাড়ীর ঘোরার জায়গা গুলোর লিস্ট

গাড়ি ভাড়া /ঝাড়গ্রাম - বেলপাহাড়ী ট্যুর

বেলপাহাড়ীর হোম স্টে ও রিসোর্ট নাম্বার@ বিচিত্র গুপ্ত