বেলপাহাড়ি ভ্রমণ, ডিসেম্বর ২০২১,(দ্বিতীয় পর্ব ।) @সূর্য পাল /দমদম
বেলপাহাড়ি ভ্রমণ, ডিসেম্বর ২০২১,
(দ্বিতীয় পর্ব ।)
@সূর্য পাল /দমদম
বেলপাহাড়ি ভ্রমণের আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে
নিয়েছিলাম । প্রধানত ধাঙ্গী কুসুম এবং হুদহুদি জলপ্রপাত আর ওখানকার সুন্দর মানুষজনের কথা লিখেছিলাম ।
এবার গাড়রাসিনী পাহাড় আর লালজল পাহাড় ।
শুরু করি গাড়রাসিনী পাহাড় দিয়ে ।
বেলপাহাড়ি ইন্দিরা পয়েন্ট থেকে টোটো স্ট্যান্ড বাঁদিকে রেখে খানিকটা এগিয়ে রাস্তাটা বাঁ দিকে ঘুরে গেছে, ওই দিকেই যেতে হবে ।
হাই স্কুল, প্রাইমারি স্কুল ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা যাবার পর রাস্তাটা দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে ।
ডান দিকের রাস্তা কুলডিহি, সিঁদুরিয়া হয়ে, দোমোহানি ব্রিজ পার হয়ে, লালজল পাহাড়ের দিকে ।
ডান দিকের রাস্তা যাচ্ছে গাড়রাসিনী পাহাড়ের দিকে । বাঁশকেত্যা, গোহালবের্যা, আগুইবিল হাট ছাড়িয়ে, প্রায় ডানদিকে বাঁক নিতে নিতে, সর্পিল পাহাড়ি পথ ধরে ধরে, পৌঁছে গেলাম গাড়রাসিনী পাহাড়ের পাদদেশে ।
পুরোটাই সুন্দর পাকা রাস্তা । সামান্য কিছু অংশ ভাঙাচোরা আছে ।
গাড়ি পার্কিং করলাম রাস্তার বাঁদিকে একটা খোলা জায়গায় ।
দেখা হলো একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে । উনি গাড়ির নাম্বার, আমাদের মোবাইল নাম্বার এবং কোথা থেকে আসছি, একটা খাতায় নোট করছিলেন । বললাম "চলুন তাহলে একটা ফটো হয়ে যাক একসাথে"
হয়েও গেল ।
এইবার পাহাড়ের পথ। উঠতে মোটামুটি আমাদের চল্লিশ মিনিট মতো সময় লেগেছে ।
কিন্তু আধা ঘন্টার মধ্যে উঠে যাওয়া যায় ।
দুই ধারে ঘন জঙ্গল ও নুড়ি পাথরের পথ, আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠে গিয়েছে । যাদের শরীর-স্বাস্থ্য একটু বেশিই ভালো, তাদের অনেককে দেখলাম রাস্তার ধারে বড় পাথরের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন ।
পাহাড়ে ওঠার মাঝপথে বামদিকে বাসুদেব ভগবানের মন্দির । মন্দিরের ধারে খানিকক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়া যায় । ওখান থেকেও নিচের দৃশ্য খুবই সুন্দর লাগে দেখতে ।
এরপরে মন্দিরকে বাঁদিকে রেখে ডান দিকে উঠে যেতে হবে । এবার কিন্তু রাস্তা বলে আর কিছু নেই বড় বড় পাথর দুদিকে গাছের মাঝখান দিয়ে সাবধানে পা ফেলে ফেলে উঠতে হবে ।
যারা উপরে উঠে নিচের দিকে নামছেন অনেকেই বলছেন "আর একটুখানি" । কিন্তু আমরা যারা উঠছি, তারা বুঝতে পারছি এই 'একটুখানিটাই' অনেকটা । এইভাবে উঠতে উঠতে কোনো এক সময় পাহাড়ের উপরে পৌঁছে গেলাম ।
দেখলাম শিবের মন্দির, মন্দির বন্ধ ছিল, বাইরে থেকে প্রণাম জানালাম । এখানেই সিদ্ধি লাভ করেছিলেন সন্ন্যাসী সত্যানন্দ মহারাজ। মন্দিরকে সামনে রেখে, মন্দিরের বাঁদিকে নিচে খ্যাঁদারানি লেক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে । এছাড়া চারিদিকে ঘন জঙ্গল অনেকগুলো ছোট ছোট ডুংরী খুব খুব সুন্দর লাগছিল ।
কলকাতার এত কাছাকাছি এত সুন্দর একটি জায়গা, আমরা আসতে পেরেছি মাত্র কয়েক ঘন্টার জার্নিতে।
এবার নামবার পালা। নামতে তেমন কোনো অসুবিধে নেই, শুধু পাথরগুলোকে মাঝে মাঝে একটু ধরে নিতে হয় দুই হাতে ।
আমরা নামছি নিচে থেকে একদল উপরে উঠেছেন, তাদের একদম সামনের সারিতে রয়েছে কয়েকটি বছর পাঁচেকের বাচ্চা। জিন্সের প্যান্ট, স্নিকার জুতো । একজনের আবার মুণ্ডিত-মস্তক তিনি উপরদিকে উঠছেন সবাইকে গাইড করে ।
বড়দের বললাম "সাবধানে খাড়াই রাস্তা । বাচ্চাদের একটু সামলে রাখুন ।"
বলতে বলতেই শুনলাম ওপর থেকে আরেকটি বাচ্চার চিৎকার "আমি লাফিয়েই নামবো। "
সে তার বাবার হাত ছেড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে
নামছে ।
একটা ভয়ঙ্কর জায়গা দেখে আমি তাকে ধরেই ফেললাম । সে আমার হাত ধরা অবস্থাতেই আরেক লাফ মারলো ।
আর বছর পঞ্চাশের একজন ভদ্রলোককে দেখলাম । তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করে তার পরিবারের লোকজনকে উপরে উঠতে বারণ করছেন । আর তারা কেউ শুনছে না ।
শেষ পর্যন্ত তিনি রাগতস্বরে তাদের বকাঝকা করতে লাগলেন ।
আমি বললাম "কী হয়েছে আপনার ঝগড়া যে সবাই শুনে ফেললাম ।" উনি বললেন "একদম মাথা ঠিক থাকে না, আমি রেগে গেলে আমি কি করি আমি নিজেই জানিনা"
বললাম "রাগ টা কিসের?"
উত্তর পেলাম "এখানে যদি পড়ে গিয়ে কোন
বিপদ ঘটে !!" আমি আর কোন কথা বাড়াই নি,আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসেছি ।
নিচে নামতে নামতে বেশ জলতেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল, খেলাম বা পান করলাম । তারপরে ফ্লাস্কের চা নিয়ে, একটু চা বিস্কুট সহযোগে নিজেদের পরিতৃপ্ত করলাম ।
উল্টো দিকে পাবলিক টয়লেট রয়েছে, কিন্তু মনে হল অব্যবহৃত । এবং খুবই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে আছে ।
এর পর গেলাম ব্রহ্মর্ষি সত্যানন্দ সন্ন্যাস আশ্রমে । 'স্বামী জগদানন্দ গিরি মহারাজ' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সুন্দর আশ্রম ।
সামনেই যজ্ঞকুণ্ড ।
পাশেই আছে শ্রীমৎ স্বামী জগদানন্দ গিরি মহারাজের সমাধি মন্দির । আশ্রমে ঢুকতে ডানদিকে রয়েছে একটি শিব মন্দির, রাম মন্দির, আরো কিছু । নানা রকম মৌসুমী ফুল গাছে চারিদিকটা সাজানো ।
আশ্রমের ভিতরে ছবি তোলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং আশ্রমের সন্ন্যাসীদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করাও নিষিদ্ধ ।
আশ্রমে ঢুকবার সময় আমরা বামদিকে কলের জলে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম । বেশ ঠান্ডা জল, কিন্তু পাহাড়ে ওঠা-নামা করে একটু পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম, ভালই লাগলো ।
একজন প্রবীণ সন্ন্যাসী আমাদের ডেকে প্রসাদ দিলেন । আমরা করজোড়ে তাঁকে প্রণাম
জানালাম । আরও সন্ন্যাসী মহারাজদের সঙ্গে
আমরা পরিচিত হলাম ।
ওনারা খুব শান্ত এবং স্নিগ্ধ স্বরে আমাদের সব কৌতুহলের জবাব দিলেন ।
মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ফলে যে সকল কুপ্রভাবে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে ।
মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয় কে জিজ্ঞাসা করলেন, ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে নামক স্থানে সমবেত হয়ে যুদ্ধকামী কুরু এবং পান্ডুর পুত্ররা কি করছে ?
ঠিকই, শ্রীমৎ ভাগবত গীতার প্রথম শ্লোক :-
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ।
মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয় ॥
লাহিড়ী মশাই বললেন, "কুরুক্ষেত্র হচ্ছে আমাদের শরীর আর আমাদের কর্মই হচ্ছে আমাদের ধর্ম ।"
উইকিপিডিয়া : -
"ক্রিয়াযোগ হল একটি যোগ পদ্ধতি। এই যোগের অনুশীলনকারীদের মতে, এটি একটি প্রাচীন যোগ পদ্ধতি, যা ১৮৬১ সালে মহাবতার বাবাজি তার প্রধান শিষ্য শ্যামাচরণ লাহিড়ির মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করেন।পরমহংস যোগানন্দের যোগী-কথামৃত বইটি এই যোগকে পাশ্চাত্য সমাজে পরিচিত করে তোলে। ১৯২০ সালের পর থেকে পাশ্চাত্যে যোগানন্দ এই যোগটিকে জনপ্রিয় করে তোলার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ভূমিকাও নিয়েছিলেন। প্রাণায়মের একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতিই এই যোগের ভিত্তি। এর মাধ্যমে অতীন্দ্রীয় চেতনা ও ঈশ্বর-সংযোগ হয় বলে এই যোগের অনুশীলনকারীরা মনে করেন।"
মনে হলো এই মন্দিরের আধ্যাত্বিক পরিবেশ এবং মন্ত্র, পুরো গাড়রাসিনী পাহাড়টাকেই
এক পবিত্র পরিমণ্ডলে ঘিরে রেখেছে ।
আশ্রমকে আরেকবার প্রণাম জানিয়ে এগিয়ে চললাম খ্যাঁদারানি লেকের দিকে।
খ্যাঁদারানি জলাধারে এখন জলের স্তর অনেকটা নিচে । কিন্তু বর্ষাকালে প্রচুর জল থাকে । লেকের অপর প্রান্তে ঘন জঙ্গল আর ছোট ছোট ডুংরীতে পরিপূর্ণ । তাদের ছায়া পড়েছে জলের মধ্যে, খুব ভালো লাগছিল ।
জলের রংটাও লাগছিল সবুজ-সবুজ ।
সবুজ মন নিয়ে গাড়রাসিনী আর খ্যাঁদারানিকে বিদায় জানালাম ।
ঠিকই করে ফেললাম আবার আসবো ।
এবার গন্তব্য লালজল পাহাড়, কিন্তু কোথাও খেতে হবে । কিন্তু তেমন কোন জায়গা পেলাম না অগত্যা গাড়িতে রাখা কেক-বিস্কুট মুড়ি চানাচুর জল চা খেয়ে দুপুরের খাবার সম্পন্ন হল ।
যে রাস্তায় এসেছি সেই রাস্তায় ফিরে যেতে হবে, বেলপাহাড়ীর দিকে না গিয়ে বাম দিকে ঘুরে যেতে হবে ভুলাভেদার দিকে ।
তবে আমরা স্থানীয় মানুষের কাছে পরামর্শ নিয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে ভেতর দিয়ে সোজা পৌঁছে গিয়েছিলাম দোমোহানি ব্রিজে । সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরে আবার পিচের পাকা বড় রাস্তা ।
গ্রামের ভেতরে রাস্তাটি ভারী সুন্দর ।
রাস্তার দুধারে ছবির মতো গ্রাম, তারপরে অনেকক্ষণ করে ফাঁকা জায়গা আবার
একটু গ্রাম । সেখানে নানা রকম কর্ম চঞ্চল
গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা দেখলাম ।
বাড়িঘাটি গ্রামে মাতৃ স্বরূপ একজন ভদ্রমহিলা নিজের কাজ ছেড়ে উঠে এসে আমাদের খুব যত্ন করে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে রাস্তাটা বেঁকেবেঁকে গিয়েছে, কোথায় স্কুল পড়বে, কোথায় পোল্ট্রি ফার্ম আছে সেগুলো সব বলে দিলেন ।
দোমোহানি ব্রিজ পার হয়ে বড় রাস্তার উপরে দেখলাম একজন পুলিশ কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টো দিক থেকে আসছেন । তাকে জিজ্ঞাসা "করলাম লালজল পাহাড় যাবো ।" বলে দিলেন সোজা যান, মাঝখানে একটা পাহাড় ডিঙোতে হবে, চার কিলোমিটার গিয়ে দেখবেন বাঁদিকে একটা "যাত্রী প্রতীক্ষালয়". সেখান থেকে লাল মাটির রাস্তায় ডান দিকে ঘুরে যাবেন ।
ঠিক সেইভাবে গিয়েই লাল মাটির রাস্তা ধরে ২ কিলোমিটার মত গিয়ে পৌঁছে গেলাম লালজল পাহাড়ের কাছে ।
বলে রাখি, পাহাড় ডিঙানো যে এত সহজ আগে জানতাম না, সুন্দর রাস্তা ।
বিকেল বিকেল হয়ে এসেছে, গাছপালা আর ছোট ছোট পাহাড়ের পিছন দিয়ে সুর্য প্রায় ডুবুডুবু । অপরূপ সুন্দর দৃশ্য । ছবি নিলাম ।
আবার দেখা হলো দুজন সিভিক ভলেন্টিয়ার বন্ধুর সঙ্গে । তারাও গাড়ির নাম্বার,মোবাইল নাম্বার এবং কোথা থেকে এসেছি একটা খাতায় নোট করছেন ।
ছোট্ট একটা সাইন বোর্ডে লাল রঙের লেখা
লালজল দেবী পাহাড়।
প্রতিষ্ঠাতা - রামস্বরূপ দেব শর্মা।
স্থাপিত-১৯৫৮ সাল ।
সৌন্দর্য - আদিম যুগের মানব গুহা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:- এখানে আমিষ ও
মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ ।
কথাবার্তা বলে শুরু করলাম পাহাড়ের উপর
দিকে উঠতে ।
এখানে পাহাড়ে উঠবার কোনও সিঁড়ি বা পথ
নেই । পাথরের খাঁজে খাঁজে পা ফেলে ফেলে উপরে উঠতে হবে। এখানকার পাথর গুলো দেখলাম কালচে রঙের ।
খানিক দূর উঠে সাদা মন্দির
মন্দিরের গায়ে লেখা রয়েছে অম্বিকানগরের
শ্রী বাণী বিকাশ চট্টোপাধ্যায় তাঁর পিতা-মাতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে মন্দিরের দরজাটি মায়ের চরণ কমলে নিবেদন করেছেন ।
মন্দিরের পাশ দিয়ে আবার ওপরে ওঠা । এবার রাস্তা সত্যিই বেশ দুর্গম বলে মনে হচ্ছিল । খুব খাড়াই এবং বড় বড় পাথর ।
বাচ্চা এবং মহিলাদের মন্দিরের একটু উপরে একটা বড় পাথরের উপর বসিয়ে, আমি আর আমার সহযাত্রী শ্রী কৃষ্ণেন্দু উঠলাম আরো
উপরে । উদ্দেশ্য সেই আদী মানবের গুহাটিকে একবার দেখে আসা । উদ্দেশ্য সফল হলো, কিন্তু বিকেল প্রায় শেষ হতে চললো, অন্ধকারের মধ্যে গুহায় প্রবেশ করার সাহস দেখাইনি ।
আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলাম সবাইকে নিয়ে । দেখলাম সিভিক ভলেন্টিয়ার দুই বন্ধু তখনও অপেক্ষা করছেন, শুধুমাত্র আমাদের জন্য ।
খুব খুব ভালো লাগলো ।
গাড়িতে বসে সহযাত্রীদের লালজল গুহার কথা একটু বললাম ।
গুহাটি প্রায় ২০০ মিটার উঁচুতে । প্রত্নতাত্ত্বিক এভিডেন্সের থেকে জানতে পারা যায়, প্রায় ৫০০০ বছর আগে এই গুহা তখনকার মানুষের বসবাসের স্থান ছিল ।
ষাট বছর আগে, রামস্বরূপ নামে একজন সন্ন্যাসী লালজলে এসে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন । শোনা যায় সাধুজীর একটা পোষা চিতাবাঘ ছিল । বাঘের সঙ্গেই তিনি গুহায় বাস করতেন।
নব্বইয়ের দশকে স্বামী রামস্বরূপ মারা গেলে, এই পাহাড়ের কোলেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় ।
তাঁর উদ্যোগেই লালজলে বাসন্তী পূজার প্রচলন হয়েছিল । এখনো প্রতিবছর বাসন্তী পূজার আয়োজন করা হয় ।
আগে এখানে একটি লাল জলের ঝর্ণা ছিল । জলের রংটা লাল ছিল, কারণ সেই জলে তামা এবং লোহা মিশ্রিত হয়ে উপর থেকে নামতো ।
এইবার আমাদের ফেরার পালা, আবার বেলপাহাড়ি হয়ে কলকাতা ।
বেলপাহাড়ি যেতে পরপর যে জায়গাগুলো পার করলাম সেগুলো এক ঝলক দেখে নিই ।
# সিয়ারবিন্দা, একটা বেশ
উচু পাহাড় টপকাতে হবে তবে
সুন্দর রাস্তা ।
# সিআরপিএফ ক্যাম্প
# তামাজুড়ি, এখানে রাস্তা
বাম দিকে ঘুরে গিয়েছে ।
# ভুলাভেদা
# দো মহানি ব্রিজ
# সিন্দুরিয়া
# কুলুডিহি
বেলপাহাড়ীতে একটু থেমে "কাঁচা লঙ্কা" রেস্টুরেন্ট থেকে চিকেন চাউমিন আর ভেজ চাউমিন প্যাক করে নিলাম, রাস্তায় যেতে যেতে খাবো বলে ।
সন্ধ্যে সাতটা পনেরো, (২১ ১২ ২০২১), ঝাড়গ্রাম পার করে শালবনির জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কলকাতার দিকে ফিরছি ।
আমাদের সামনে একটা বাস। বাসটা আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে গেলো, আমরাও দাঁড়ালাম ।
প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো চেকিং চলছে বা কোথাও কোনো অসুবিধা হয়েছে ।
কিন্তু বিস্ময়ের তখনো অনেক কিছু বাকি ছিলো ।
একদল বুনো হাতি রাস্তার বাঁ দিক থেকে বেরিয়ে, ডানদিকের জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে । সঙ্গে কয়েকটি বাচ্চা হাতি, কয়েকটি মাঝারি সাইজের হাতি ।
আমরা চিড়িয়াখানায়, সার্কাসে, পূজার শোভাযাত্রায় হাতি দেখেছি ।
কিন্তু জঙ্গলের হাতি এমন করে দেখতে পাবো ভাবিনি । ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালাম । উত্তেজনায় ছবি তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম । মেয়ে ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ নিয়েছিল, তার থেকে আবছা কিছু ছবি আসছে ।
আর যথারীতি কোলাঘাটে নেমে. 'শের-ই-পাঞ্জাব' ধাবা থেকে প্রথমে এক কাপ করে কফি, তারপর রাতের খাবার প্যাক নিয়ে ফিরে আসলাম ।
আমার এই নিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ । সবাই ভাল থাকবেন ।
শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা সহ,
সূর্য্য কুমার পাল, দমদম ।।
প্রথম পর্বের লিংক :-
https://m.facebook.com/groups/bonnerjee/permalink/5131883223530510/
Comments