বেলপাহাড়ী চড়ক মেলায় আসুন // বিচিত্র গুপ্ত

বেলপাহাড়ী
হলিতে রুম না পেয়ে আসতে পারেন নি তো কি হয়েছে.... 

চড়ক মেলাতে আসুন... 

স্বাভাবিক। অনেক ইচ্চে ,প্লান পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি একটানা ২/৩ দিনের ছুটি হাতে থাকা সত্তেও ঝাড়গ্রাম তথা বেলপাহাড়ীতে ,কেবল মাত্র থাকার রুম না পাওয়ার কারণে ,আসতে না পারার জন্যে মন ভেঙে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনার জায়গাতে আমি থাকলেও ,ওই একই অনুভূতি আমারও হত বৈকি।কিন্তু কি আর করার! হলি তে আসতে পারেন নি বলে যে আর আসতে পারবেন না,এমনটা তো নয়, তাই না?? হা,এটা অবশ্যই ঠিক যে এখন এখানকার দুপুরের তাপমাত্রা ক্রমশ ঊর্ধ্ব মুখী। এক মাসের মধ্যে থার্মোমিটার এর পারদ প্রায় ৪২/৪৩ এর দাগ ছুঁয়ে ফেলবে। তা ফেলুক না। আমি আপনাকে একটা দারুন সময়ের কথা বলছি, নতুন করে আরো একবার বেলপাহাড়ি আসার পরিকল্পনা করতে পারেন। 

কাঁকড়াঝোড়।বেলপাহাড়ীর অন্যতম প্রকৃতি পর্যটন স্থল এই কাঁকড়াঝোড়। আগামী ৩১ চৈত্র, ১৪২৮ ,বৃহস্পতিবার। কাঁকড়াঝোড় এর ভৈরব থানে বসবে সুবিশাল চড়ক মেলা। আবার যেহেতু প্রতি বৃহস্পতি বার কাঁকড়াঝড়ে হাট বসে, সেহেতু পাহাড়ী জঙ্গলি ছোট্ট হাট উপভোগ করারও সুবর্ন সুযোগ। চারিদিকে খুব প্রাচীন প্রাচীন সুউচ্চ শাল গাছের বন,দুই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দুটি প্রাচীন পাহাড়ী নদী। রয়েছে বাবা ভৈরব এর প্রাচীন মন্দির।সেখানেই প্রতি বছরের মত এবছর ও বসবে চড়ক মেলা। আমার দেখা সর্বোচ্চ চড়ক এই কাঁকড়াঝড়ের ভৈরব থানেই । এর সঙ্গে উপরি পাওনা সারা রাত ধরে পুরুলিয়ার ছৌ নাচ। আঃ। একটা খাটিয়া পেতে , জঙ্গল ঘেরা প্রকৃতির মধ্যে ,ছৌ নাচ উপভোগ করতে করতে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৯ কে সাদরে বরণ করে নেবেন, এ তো এক পরম পাওয়া বটে। 

হা, এই সেই কাঁকড়াঝোড়, যেটি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা ,তথা বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার সব থেকে উঁচু জায়গা। এই কাঁকড়াঝোড়এর আমলাশোল-আম ঝর্ণা তে ই অবস্থিত সর্বোচ্চ পাহাড় 'বড় পাহাড়'। এখানেই দক্ষিণ বঙ্গের প্রথম হোম স্টে 'মাহাত হোম স্টে' অবস্থিত। এখানেই হয়েছে টেনিদা চিন্ময় রায়,রবিঘোষ অভিনীত 'চারমূর্তি ' সিনেমার শুটিং। মোটা গোঁফওয়ালা গারোয়ান গোপীনাথ মাহাত মহাশয়ের বাড়িতেই গড়ে ওঠে মাহাত হোম স্টে। বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, পরিচালক উমানাথ ভট্টাচার্য্য ,রবি ঘোষ, চিন্ময় রায় সহ বহু বিখ্যাত বাঙালি মনীষীর পদধূলিতে সমৃদ্ধ এই কাঁকড়াঝোড়। 

এখান থেকে ঘাটসিলা মাত্র ২৪ কিমি। ঝিলিমিলি,তালবেরিয়া ড্যাম,সুতান জঙ্গল ২২ কিমি, ধাঙ্গিকুসুম মাত্র ১৫ কিমি। লালজল গুহা ১৯ কিমি মত। পাহাড়ে কিংবা গভীর জঙ্গলে আপন মনে ট্রেক করতে চাইলেও এই জায়গার তুলনা নেই।কাঁকড়াঝোড়-তেলিঘানা-নুনঢালা-বিরগি-উখুলডোবা হয়ে গাডরাসিনি বা ভুলাভেদা দক্ষিণ বঙ্গের অত্যন্ত পুরোনো ও জনপ্রিয় জঙ্গলের ট্রেকিং রুট। ১৪ই এপ্রিল বৃহস্পতি বার থেকে পরবর্তী রবিবার পর্যন্ত একটা অন্যরকম অবসর যাপন করার জন্যে বেলপাহাড়ী আসা যেতেই পারে। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৈশাখ মাসের ১০ তারিখ,অর্থাৎ ২৪ শে এপ্রিল চিড়াকুটি তেও হবে সারা রাত ছৌনাচ এবং চড়ক মেলা।

Comments

Popular posts from this blog

বেলপাহাড়ীর ঘোরার জায়গা গুলোর লিস্ট

গাড়ি ভাড়া /ঝাড়গ্রাম - বেলপাহাড়ী ট্যুর

বেলপাহাড়ীর হোম স্টে ও রিসোর্ট নাম্বার@ বিচিত্র গুপ্ত