ঝটিকা সফরে ঝাড়্গ্রাম- বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোর পর্ব ১// সুমেধা চট্টোপাধ্যায়

ঝটিকা সফরে ঝাড়্গ্রাম- বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোর

পর্ব ১

@ সুমেধা চট্টোপাধ্যায়

যাত্রাপথ

ভ্রামণিক ও লেখক শ্রী ভগীরথ মিশ্রর মতে দেখার জায়গার মতো যাত্রাপথও কিন্তু যে কোন ভ্রমণকাহিনীর অঙ্গ। তাই প্রথম পর্বে আমাদের যাত্রাপথের গল্প রইল। 

অনেকদিন ধরেই গাড়ি নিয়ে কাছাকাছি কোথাও আমরা যাব ভাবছিলাম। এখন তো অনলাইন ক্লাসের চক্করে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকেও বাবা-মা এর নাজেহাল দশা। বাড়ির বদলে বাইরে ক্লাস করতে গেলে বই-পত্র, স্কুলড্রেস এসব আবার টেনে নিয়ে যাওয়ার ঝক্কি থাকে। তাই সব সামলে টিনটিনের মিড টার্ম পরীক্ষার পর আমাদের ঝাড়্গ্রাম-বেলপাহাড়ি-কাঁকরাঝোর যাওয়া ঠিক হল। সিদ্ধার্থ-অর্য্যমা এবং ছোট্ট অনুত্তরার সাথে আমাদের আগে একবার তাকদা যাওয়ার প্ল্যান ঠিক করেও বাস্তবায়িত হয় নি। ওদের জানানোতেই সিদ্ধার্থ সহাস্যে বলল 'আরে সুমেধা, আমরাও তো কয়েকদিন ধরে ঝাড়্গ্রামের কথাই ভাবছিলাম। কি আশ্চর্য দেখো! আমি বেশ কিছু পড়াশোনাও করেছি।' অতএব থাকার জায়গা বুক করা নিয়ে তোলপাড় শুরু হল। বনবিভাগের বুকিং করোনার জন্য বন্ধ। রাজবাড়ি আমাদের পছন্দের দিনে ফাঁকা নেই। সিদ্ধার্থর চেষ্টায় ফুলবেড়িয়ার কাছে একটি জায়গায় বেশ অল্প ক'দিনের নোটিসে দুটি ঘর পাওয়া গেল (থাকার জায়গা নিয়ে সবিস্তারে লিখব পরে)। 
তবে আমার মতে যারা প্রকৃতি ভালবাসেন তারা বনবিভাগের প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্র বা গড় শালবনীর নন্দিনী হোমস্টে তে থাকতে পারেন। 
যাই হোক, দেখার জায়গা ঠিক করে সাদা কাগজে লিস্ট করে, গাড়িতে হাওয়া-পেট্রল দিয়ে আমরা তো উত্তেজনায় ফুটছি। সিদ্ধার্থ আমাদের হোয়া গ্রুপে রোজ আপডেট দিচ্ছে 'আর তিন দিন, আর দু'দিন' এসব লিখে। 
হঠাৎ ই বৃহস্পতিবার অর্য্যমা'র ফোন আমাকে। শনিবার আমাদের যাওয়া। অফিসটাইমে ফোন দেখেই বুঝলাম কিছু তো 'গুরুগম্ভীর গুরুতর'। ফোনের ওপারে 'সুমেধা,গুড়িয়ার পেরেন্ট-টীচার মিটিং পরেছে শনিবার। কি করি বল তো!" চিন্তিত গলা ওপারে। আলোচনায় ঠিক হল আমরা বেশ ভোর ভোর বেরিয়ে মাঝে নেটওয়ার্ক আছে দেখে দাঁড়াব। সেখানে মিটিং করে নেওয়া হবে। যদি দেখা যায় নেটওয়ার্ক থাকছে, তাহলে যেতে যেতেই করে নেওয়া হবে। বুঝলাম করোনা সব খারাপ করে নি। 

আগের দিন সব গোছগাছ করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া হল। সোয়া ছ'টায় আমরা ভি আই পি বাজারের সিমলা বিরিয়ানী র সামনে থেকে দুটি ছোট অল্টো সব তাজা প্রাণ নিয়ে রওনা দিল। আজাদ হিন্দ ধাবায় থামব ঠিক হল। 
চোখের নিমেষে এসে পড়ল আজাদ হিন্দ। আমরা আলুর পরোটা এবং ধোসা অর্ডার দিলাম। সবার আগে একটি লাল রঙের আচার জাতীয় জিনিস দিয়ে গেল। দেখেই ঝাল লেগে গেল আমাদের। বাকি জিনিস ভালোই ছিল। একদমই ভিড় ছিল না। আলুর পরোটা টা ঝাল লাগায় আমরা সাথে টক দই নিয়েছিলাম। আকাশ হাল্কা মেঘলা হচ্ছিল। বেরিয়ে পড়লাম আবার আমরা, একটি গ্রুপফি তুলে। 
পর পর সব কাশ ফুলের জায়গা পেরোতে লাগল। আবার অর্য্যমা'র ফোন।'এই সুমেধা, দারুণ সব কাশফুলের জায়গা পেরিয়ে যাচ্ছে, আমরা থামব না?' নিজেদের গাড়িতে যাওয়ার এই এক সুবিধা। ইচ্ছামতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলা যায়। আর আমরা যারা শহরের ইঁট আর কংক্রিটে বড় হয়েছি তাদের তো কাশ ফুল নিয়ে একটু পাগলামি থাকবেই। কাশফুলের সাথে ফটোসেশান। সাথে ছিল কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া। উদরস্থ হল।
পথ চলতে শুরু করলাম আবার। এর মধ্যেই এক ফাঁকে পেরেন্ট-টীচার মিটিং হল। পরের গন্তব্য গুপ্তমণি মন্দির। আমরা আবার বেড়াতে এসে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে রাজি নই। তাই বেশ কিছু জায়গা দেখে আমরা একটু দেরি করেই দুপুরের খাবার খাব ঠিক হল। সিদ্ধার্থ আমাদের লিড করছে। জিপিএস এ গুপ্তমণি মন্দির সার্চ দিয়ে ও এগোল। পিছনে আমরা।

Comments

Popular posts from this blog

বেলপাহাড়ীর ঘোরার জায়গা গুলোর লিস্ট

গাড়ি ভাড়া /ঝাড়গ্রাম - বেলপাহাড়ী ট্যুর

বেলপাহাড়ীর হোম স্টে ও রিসোর্ট নাম্বার@ বিচিত্র গুপ্ত