_ভৈরব বাবার থান - কাকরাঝোর, বেলপাহাড়ি// সন্দীপন দাস
||_ভৈরব বাবার থান - কাকরাঝোর, বেলপাহাড়ি_||
@ সন্দীপন দাস/ঝাড়গ্রাম
ঝাড়গ্রামের সবচাইতে লোভনীয় ট্যুরিস্ট স্পট হলো বেলপাহাড়ির কাকরাঝোর। মূলতঃ বিস্তীর্ণ গভীর পাহাড়ি জঙ্গল এবং তার বুক চিরে চলে যাওয়া কালো ঢেউখেলানো রাস্তায় বাইক চালানোর জন্য দলে দলে বাইকাররা আসেন কাকরাঝোরে। কাকরাঝোরের কোনও স্পট সে অর্থে এখনও প্রসিদ্ধ হয়নি। কাকরাঝোর মূলতঃ এই রোড ট্রিপ বা বাইক-ট্রেইল এর জন্যই বিখ্যাত।
তবে কাকরাঝোরের ভৈরব বাবার থান একটি সুন্দর শান্তির জায়গা। তার সংলগ্ন জায়গা জুড়ে শালজঙ্গলে সারাদিন ধরে আলো-আঁধারির খেলা চলে। বাবার থানের ঠিক ঢিলছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে কাকরাঝোর ড্যাম। একটি পাহাড়ি নদী কবিতার ছন্দের মতন এখানে সারাদিন অবিরাম বয়ে চলে। নদীটার নাম খানি ভারি মিষ্টি। 'খরস্বতী'। যখন কাকরাঝোর থেকে বাঁদিকে বেঁকে ভৈরব থানের দিকে আসবেন তখন এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি রাস্তা ধরতে হবে। বাঁদিকে থাকবে উঁচু পাহাড় আর ডানদিক দিয়ে খরস্বতী আপনার পাশে পাশে যাবে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। (এই নদী ঘাটশিলার আগে সুবর্ণরেখা নদীতে মিশেছে)
এইখানে চুপি চুপি বলে রাখি, জায়গাটা পশ্চিমবঙ্গে নয়। এটা ঝাড়খণ্ডে। জায়গাটার সত্যিকারের নাম কানিমহুলি। বর্ডার পেরিয়ে এক কিলোমিটারের কমই হবে এই জায়গাটা। কিন্তু, কানিমহুলি ভৈরব থান বললে কেউ চিনবেন না আর আপনাদের রাস্তাও দেখাতে পারবেন না। তাই এটাকে কাকরাঝোর ভৈরব বাবার থান নামেই ডাকছি।
এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আরও অনেক ভৈরব থানের সন্ধান পাওয়া যায়। আনুমানিক এই প্রতিটি ভৈরব থানের স্থাপনা আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে হয়। মূলতঃ স্থানীয় শবর জনজাতির মানুষেরা এই থানের প্রধান উপাসক।
এখানের শালগাছগুলো এই জায়গার ইউ.এস.পি। এত বড় বড় শালগাছ বর্তমানে অন্য কোথাও দেখা যায়না বললেই চলে। সারাদিন ধরে এখানে আলো-আঁধারির খেলা চলে। চড়ক মেলার সময় এখানে যে উচ্চতার চড়ক হয়, তা হয় তো আর অন্য কোথাও দেখা যাবে না। অত প্রাচীন শাল মহীরুহের ওপরে আরও লম্বা বাঁশ বেঁধে তার ওপরে ওঠা হয়। এই বিস্তীর্ণ জঙ্গলমহলে, শালজঙ্গল ঘেরা এই পর্ণমোচী ভূ-ভাগের মানুষজন শালগাছের ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল থাকে। পাতাঝরার মরশুমে গাছের পাতা কুড়িয়ে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই, সব পাতা ঝরে যাওয়ার পর, যখন শালগাছে আবার নতুন কচি কচি লাল লাল পাতা গজায়, তখন জঙ্গলের সবচাইতে পুরানো শালগাছটিকে গ্রামের লোকজন পূজা করে। গাছেদের এত উপকারের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন বাসিন্দারা। একে বলে শারল পূজা (সারল, শারুল)। স্থানীয় ভাষায় শালফুলকে শারল আর শালপাতাকে শিয়াপাতা বলা হয়। প্রকৃতির সকল আয়োজন যেন কোনও জটিল পাটিগণিতের নিখুঁত কষা উত্তর - সেটা এই সকল জায়গাগুলোতে না এলে বোঝে কার সাধ্যি!!
এখানে এলে দেবী, হপন এদের দেখতে পাবেন। আপনাদের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করবে কিন্তু বিরক্ত করবে না আপনাকে। জঙ্গলে একটা অমৃত পাওয়া যায় জানেন তো? যেটা ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বাজারে হাই ডিমান্ডে বিক্রি হয়। "কাড়াং ছাতু"। হপন আমাকে একগাদা কাড়াং ছাতু দিয়ে বললো "১৫ টাকা দে"। আমি মনে মনে হাসলাম। ভাবলাম এই জিনিস এতটা পরিমাণ বাজারে কিনতে গেলে ১৫ কে ১০ দিয়ে গুন করলেও কেউ দেবে না। আমি ওটা নিয়ে সবাইকে ১৫ টাকা করে দিলাম। ওদের জিজ্ঞেস করলাম স্কুলে পড়ে কিনা। দেবী বলল "খিচড়ি স্কুলে পড়ি" -"রোজ গোটা ডিম দেয়"।
আর, আমি ভাবলাম... বেশ।
পথনির্দেশ: কাকরাঝোর গ্রামে ঢোকার আগে নদীর কজ়ওয়ে পেরিয়েই টুক করে বাঁদিকে বেঁকে ঘাটশিলার রাস্তা ধরলে তিন কিলোমিটার মতন।
Google Map Link:
Shree shree baba vairab mandir
Unnamed Road, Kanimahuli, Jharkhand 832303
https://maps.app.goo.gl/JjnWHS3kmYj6Dxad6
Comments