বেলপাহাড়ী র দুর্গা পুজো পরিক্রমা// বিচিত্র গুপ্ত
বেলপাহাড়ী পর্যটন ও বেলপাহাড়ীর দুর্গা পূজো পরিক্রমা / বিচিত্র গুপ্ত
এবছর দুর্গা পূজার সময় অনেকেই বেলপাহাড়ী পর্যটনে আসছেন। নিজেদের পরিচিত যাপিত জীবনের এক ঘেয়ে রুটিন থেকে নিজেকে সরিয়ে, পাহাড় জংগল ঘেরা সবুজের সাথে নিজেকে উজাড় করে , বুক ভরে স্বস্তির বাতাস নেওয়ার জন্য পুজোর কয়েকটা দিন ঝাড়গ্রাম তথা বেলপাহাড়ী তে যারা আসার প্লান করেছেন, বেলপাহাড়ী র বিভিন্ন পর্যটন স্থান ( ঘাগরা জলপ্রপাত, তারাফেনী ড্যাম ,গাররাসিনি পাহাড়, খান্দারানী ড্যাম, ঢাঙ্গি কুসুমের হুদ হুদি জলপ্রপাত, কেটকি ঝর্ণা, কাঁকড়া ঝোর, লালজল গুহা , হাঁসা ডু ঙ রি , কানাইসর পাহাড়, চিতি পাহাড় ইত্যাদি)ভ্রমণের পাশাপাশি বেলপাহাড়ী র যে সকল দুর্গা পুজো আপনি উপভোগ করতে পারবেন ,তার একটা তালিকা এখানে দেওয়া হলো।
১. বেলপাহাড়ী দক্ষিণ পাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব :
এই পুজো বেলপাহাড়ী র ইন্দিরা চক থেকে SBI ব্যাংক এর রাস্তা ধরে ১০০ মিটার মত এগোলেই ব্রিটিশ দের ফেলে যাওয়া নীল কারখানার মাঠে হয়ে থাকে।
২. বেলপাহাড়ী এস সি হাই ইস্কুল এর পুজো:
বেলপাহাড়ী এস টি হাই ইস্কুল মাঠে এই দুর্গা পূজার আয়োজন হয়। ইন্দিরা চক থেকে ৫ নং রাজ্য সড়ক ধরে পুরুলিয়া এর দিকে ৫০০ মিটার মত গেলেই এই পুজো।
৩. ডুমুরিয়া গ্রামের দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী থেকে ডুমুরিয়া গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৪ কিমি। SBI ব্যাংকের রাস্তা ধরে সন্দাঁপাড়া, ছেঁড়া গ্রাম পার হলে এই গ্রাম। ২০০ মিটার ব্যবধানে এই গ্রামে দুটো দুর্গা পুজো হয়ে থাকে।
৪. গণ্ডাপাল গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অফিস এর দক্ষিণ দিকে থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে গণ্ডাপাল গ্রাম। আলোকময় এই গ্রামের দুর্গা পূজোয় কোভিড নিয়ম মেনেই হবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৫. বামুনডিহা গ্রামের বারোয়ারি দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী থেকে ঘাগরা-তারাফেনী যাওয়ার রাস্তা ধরে মোটামুটি ২ কিমি গিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে ডান দিকের পাকা রাস্তা বরারবর মোটামুটি আরো ৩ কিমি গেলে বেলপাহাড়ী র অন্যতম সমৃদ্ধ বৃহৎ গ্রাম বামুনডিহার এই দুর্গা পুজো ও পুজোর পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৬. শুকজোড়া গ্রামের দুর্গা পুজো:
এই গ্রামও বেশ সমৃদ্ধ সাজানো গোছানো । বেলপাহাড়ী হাসপাতাল রোড ধরে সিলদা এর দিকের রাস্তা বরাবর ৪ কিমি গেলে এই গ্রাম। গ্রামীন রীতি নীতি অনুসারে হওয়া এই দুর্গা পুজো পরিক্রমায় অবশ্যই যেতে হবে।
৭ . বালিচুয়া গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী- কাঁকড়াঝোর রোড ধরে ৬ কিমি গেলে বালিচুয়া গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে চিতি পাহাড় ( অন্যতম রকিং পাহাড়)। একটু পাশেই গজপাথর সরোবর /তুলসিবনী সরোবর/গম বাঁধ ।
৮. কাঁকড়াঝোর দুর্গা পুজো:
জংগল পাহাড় ঘেরা কাঁকড়া ঝোরের দুর্গা পুজো আপনাকে এক অনন্য উপলব্ধি এনে দেবে। কাঁকড়াঝোরের বন্য প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করার পাশাপাশি দুর্গাপূজোর আনন্দ ,এক কথায় বাড়তি পাওনা।
৯. কেন্দা পাড়া র দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী থেকে মাত্র ৩ কিমি। ডুমুরিয়া গ্রামে যাওয়ার পথে ছেঁড়া গ্রাম থেকে ডান দিকে যে পাকা রাস্তা বেড়িয়ে গেছে, সেই রাস্তা ধরে এগোলেই প্রথম গ্রাম কেন্দা পাড়া। এই গ্রামের পাশেই বেলপাহাড়ী র বিখ্যাত শ্বেত পাথরের পাহাড় 'হাঁসা ডু ঙ রি ' অবস্থিত। এই গ্রামের দুর্গা পুজোও এক অন্যরকম আনন্দ দেবে।
১০. সিলদা এর দুর্গা পুজো:
চুয়ার বিদ্রোহ এর অন্যতম পীঠস্থান সিলদা গ্রামে মোট ৩ টি দুর্গা পুজো হয়ে থাকে। জাঁক জমকে বেশ বর্ণময় এই পুজো গুলো। এখানে রয়েছে রাজা কিশোরমনি এর (মতান্তরে রানী কিশোর মনির রাজবাড়ী) এর রাজবাড়ী, শিব মন্দির,নাট মন্দির ইত্যাদি প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য উপভোগ করার পাশাপাশি দুর্গা পুজো পরিক্রমা অন্য এক মাত্র এনে দেবে।
১১. নারায়ণপুর দুর্গা পুজো :
সিলদা থেকে বেলপাহাড়ী র রাস্তায় সিলদা থেকে ২ কিমি,বেলপাহাড়ী থেকে ৫ কিমি আগে নারায়নপুর গ্রাম। এই গ্রামের দুর্গা পুজো বেশ বর্ণময়।
১২. কেচন্দা গ্রামের দুর্গা পুজো:
তারাফেনী নদীর তীরবর্তী একটি সমৃদ্ধ গ্রাম এই কেচন্দা গ্রাম। তারাফেনী রিভার ড্যাম পার হয়ে মাত্র 2 কিমি গেলে এই গ্রাম। স্থানীয় কোন মানুষ কে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে ওই গ্রামে যাওয়ার পথ নির্দেশ দিয়ে দেবে। ঘগরা তারাফেনী ভ্রমন কালে এই দুর্গা পুজো একবার দেখে নেওয়া যায় বটে।
১৩. জামবনি-বড়শোল দুর্গা পুজো:
তারাফেনী গ্রাম পার হয়ে বাম দিকের পাকা রাস্তা বরাবর ৪ কিমি গেলে এই গ্রাম। এই গ্রামের পাশেই বড়শোল গ্রামে রয়েছে এই অঞ্চলের প্রথম নীল কারখানা ও নীল কুঠির ভগ্নাবশেষ। রয়েছে কর আদায় করার খাজাঞ্চি খানা। সুতরাং দুর্গা পূজার ভ্রমণ শেষে একবার এই নীল কারখানা দেখে নিতে পারেন।
১৪. ভুলাভেদা ও তামাজুড়ি গ্রামের দুর্গা পুজো:
বেলপাহাড়ী থেকে ৫ নং রাস্তা ধরে ঝিলিমিলির দিকে ১০/১১ কিমি গেলে প্রথমগ্রাম ভুলাভেদা। এই গ্রামের দুর্গা পুজো দেখার পাশাপাশি আপনি পরের প্রাচীন তামাজুড়ি গ্রাম এর দুর্গা পুজো ঘুরে দেখতে পারেন।জানিয়ে রাখি এই গ্রামেই ১৮৮৩ সালে তাম্র যুগের তামার কুঠার পাওয়া গেছিল। এবং এই গ্রামেই রয়েছে আরো একটি অক্ষত নীল কারখানা ও কুঠির বাঁধ। সেটাও ঘুরে দেখে নিতে পারেন।
১৫. বাঁশপাহাড়ী দুর্গা পুজো:
ভুলাভেদা ,তামাজুড়ি গ্রামের দুর্গা পুজো দেখে ,লালজল গুহা পরিদর্শন করে আপনি চাকাডোবা পার হয়ে ঝিলিমিলি থেকে ৪ কিমি আগে এই বাঁশপাহাড়ী গ্রাম। এই গ্রামের পুজো আপনি সানন্দে উপভোগ করতে পারেন।
১৬. পচাপানী গ্রামের দুর্গা পুজো:
বাঁশ পাহাড়ী গ্রামের কাছেই অন্যতম একটি প্রত্যন্ত(remote village) গ্রাম এই পচাপানী। একদম জংগলময় প্রত্যন্ত কোন গ্রামের দুর্গা পুজো দেখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে এই পচা পানী গ্রামে যেতেই হবে।
১৭. ওরগোন্দা গ্রামের দুর্গা পুজো:
সিলদা থেকে বাঁকুড়া রোড ধরে ১.৫ কিমি গেলে এই গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে খুব প্রাচীন 'বাবা ভৈরব মন্দির' ।গ্রামের আনাচে কানাচে তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জৈন দের বহু স্থাপত্য নিদর্শন। প্রসঙ্গত বলে রাখি প্রতি বছর দ্বাদশীর দিন এখানের 'বাবাভৈরব থানের 'মাঠে বসে পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহত্তম 'আদিবাসী মেলা' 'পাটা বিন্দার' মেলা। কোভিড এর কারনে এই বছর মেলা বন্ধ থাকবে।তবে নিয়ম মেনে পুজো অর্চনা চলবে।
সুতরাং বেলপাহাড়ী তে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এই অঞ্চলের দুর্গা পুজো পরিক্রমার নিমন্ত্রণ রইলো। পুজোর কয়েকটা দিন না হয় কাটুক বেলপাহাড়ী র বিভিন্ন গ্রামের দুর্গা পূজোর আন্তরিক জাঁক-জমকহীন, গ্রামের মানুষের অনাবিল আনন্দ মুখর সন্ধ্যার সাথে।
বি.দ্র:- বেলপাহাড়ী পৌঁছে স্থানীয় মানুষের সাথে প্রয়োজনে পরামর্শ করে কিভাবে কোথায় কোন গ্রামে যাবেন দুর্গা পুজো দেখতে ,সেই প্লান করে নিতে পারেন। এটুকু বলা যাবে, আপনি আপনার জীবনের এক স্মরণীয় দুর্গা পুজো কাটাতে পারবেন এই বার বেলপাহাড়ীতে দুর্গা পূজার কয়েকটা দিন যদি কাটাতে পারেন।
Comments