ঝটিকা সফরে ঝাড়্গ্রাম- বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোর পর্ব ২// সুমেধা চট্টোপাধ্যায়
ঝটিকা সফরে ঝাড়্গ্রাম- বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোর
পর্ব ২
@ সুমেধা চট্টোপাধ্যায়
পথ হারানো, সারমেয় কান্ড ও উদ্ধার
গুপ্তমণি জিপিএস এ সার্চ সিয়ে সিদ্ধার্থ তো এগোল। বাঁ দিকে দেখলাম একটা বাসস্টপ পার হল, গুপ্তমণি লেখা। সেটি পেরিয়ে বেশ খানিক দূর গিয়ে দেখি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। জিপিএস ইউ টার্ন দেখাচ্ছে। বুঝলাম যে মন্দিরটি রাস্তার ওপারে। এবং ইউ টার্ন নিলেও বেশ খানিকটা পিছনে আসতে হবে। তাই ঝটিকা সিদ্ধান্ত হল যে আমরা মন্দিরটি ফেরার দিন দেখব। অতঃকিম পরের গন্তব্য কৃষ গার্ডেন। গুপ্তমণির ইতিহাস বৃত্তান্তটিও তোলা রইল। ফেরার দিন ই সবিস্তারে বলব।
গড় শালবনী, লোধাশুলির জঙ্গুলে এবং নয়নজুড়ানো সবুজ প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে আমরা ঝাড়্গ্রামে প্রবেশ করলাম। পুরো রাস্তাটিই দারুণ সুন্দর। মা বাড়ি থেকে ফোনে জানাল যে প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতা ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা শরতের কাশফুল ও সোনা রোদ মেখেই ঢুকে পড়লাম ঝাড়্গ্রামে।
হঠাৎ দেখি সিদ্ধার্থ মূল পিচ রাস্তা ছেড়ে একটি মোরামের লাল মাটির রাস্তায় ঢুকলো। জনমানব হীন। কিছু দূর যাওয়ার পর চোখে পড়ল বাঁ দিকে কয়েক জন লোক বসে আছেন। এবং অবাক হয়ে আমাদের দেখলেন। তাদের ছাড়িয়ে জিপিএস এর মহিলাকণ্ঠে আবিষ্ট দুই ড্রাইভার তো এগোচ্ছে। সরু রাস্তা। দু'পাশে জঙ্গল। খানিক দূর গিয়ে সামনে এবং ডানদিকে দুটি আরও সরু রাস্তা চলে যাচ্ছে। মহিলাকণ্ঠ ডানদিকেরটি দেখাচ্ছে। কিন্তু সেখান দিয়ে খুব কষ্টে দুটি গাড়ি পিছন পিছন যেতে পারবে। আমরা তো বেশ ভয় পেলাম। সিদ্ধার্থ ও কাঁচুমাচু মুখে নেমে এসে বলল 'এই রাস্তাই তো দেখাচ্ছে গো। কিন্তু কিভাবে যাব বুঝে উঠতে পারছি না।' আমরা দুই মহিলা তখন বলে কয়ে ওদের রাজি করালাম যে এই রাস্তায় ঢোকার মুখে যারা বসেছিল তাদের কাছে একবার জিজ্ঞাসা করে আসা হোক কোথায় যাব। তারা দু'জন তো গেল। বেশ খানিক দূরের পর আর ওদের দেখাও গেল না। জনমানবহীন এক জঙ্গলঘেরা মোরাম রাস্তায় দু'টি অল্টো গাড়ি পর পর দাঁড়িয়ে, দুই আধুনিকা দুটি বাচ্চার হাত ধরে।
এমত অবস্থায় হঠাৎ দেখি ডানদিকের সরু রাস্তাটি দিয়ে প্রায় জঙ্গল ফুঁড়ে সামনে এসে হাজির হল এক বৃহদাকার স্করপিও গাড়ি। কিন্তু উনি তো আর এগোতে পারবেন না। সামনে দুই 'শিশু' অল্টো দাঁড়িয়ে৷ ওদিকে ড্রাইভার দুইজন তো দৃষ্টির আড়ালে। অর্য্যমা এগিয়ে গিয়ে 'বৃহদাকার'এর ড্রাইভারের সাথে কথা বলল। তারপর সিদ্ধার্থকে ফোন লাগাল। অবশ্যই দৌড়ে আসতে বলল। তিনটি গাড়ি সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়ে, দুই অল্টো মিলে যেন পথ আটকেছে স্করপিও'র। ফোনেরও বেশ কয়েক মিনিট পর দেখি দুই মূর্তি আসছে, ঠিক দৌড়ে নয়, জোরে হেঁটে। পিছনে তিন সারমেয় গলায় বেল্ট বাঁধা। আসার পর শুনলাম যে বাড়িতে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিল সে বাড়ির মালকিনের আগে তার সাতখানা পুষ্যি বেরিয়ে এসেছে রাস্তার খোঁজ দিতে৷ আমরা একটি ভুল টার্নিং এ ঢুকেছি, পরের রাস্তাটি তে ঢুকতে হবে। সেই সাতটির মধ্যে তিনজন আগন্তুকদের পিছু নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত সি-অফ করতে এসেছে। স্করপিও'র ড্রাইভার বললেন গাড়ি ব্যাক করিয়ে ওনাদের পিছু নিতে, ওনারাই পথ দেখিয়ে দেবেন। সৌমিত্র ও সিদ্ধার্থ চকিতে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল। স্করপিও ভীম বিক্রমে বেরোল। অনেক কষ্টে ছোট'রা মুখ ঘুরিয়ে রওনা দিলে। স্করপিও'র চালক কথা রেখেছেন।
মিনিট দশেকের মধ্যে এসে পৌঁছলাম কৃষ গার্ডেনের সামনে।
এটি একটি amusement পার্ক। এক ভদ্রলোক তাঁর নাতির নামে এই পার্কটি করেছেন। চারিদিক জঙ্গলে ঘেরা। বড়দের ৫০/- ও ছোটদের ২০/- টিকিট কাটা হল। মন ভরে গেল রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে দেখে। কোন লোক তেমন নেই। দু'জন ঘাস ট্রিমিং করছিল। বাচ্চারা বেশ দৌড়াদৌড়ি করে খানিক খেলল।ওদের জন্যই মূলত এই জায়গায় আসা। এখানে ছোট একটি aviary এবং একটি aquarium আছে। মেনটেনেন্স বেশ ভালো। অনেক ধরণের টিয়া দেখলাম। অনেক রঙের বলা যায়৷ দুটি পাশাপাশি খাঁচায় রাখা টার্কি র মধ্যে কথোপকথন দেখলাম। আর একটি ইমু রাখা আলাদা করে। ক্ষুদে রা তো খুব খুশি। চড়া রোদে তারা বেশ আনন্দই করল। আমরাও কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া মজার সব মুহূর্ত রোমন্থন করলাম। পরের গন্তব্য ঝাড়্গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র, আদিবাসী সংগ্রহশালা, চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির ও রাজবাড়ি।
সবাই একপ্রস্থ জলপান করে গাড়িে উঠলাম। গাড়ি চলতে শুরু করল।
পর্ব ১ঃ
https://m.facebook.com/groups/bonnerjee/permalink/4905216262863875
Comments