চেনা অচেনা বেলপাহাড়ী// অভিজিৎ কুন্ডু
চেনা অচেনা বেলপাহাড়ী// অভিজিৎ কুন্ডু
আবার বেলপাহাড়ী!! বেলপাহাড়ীতে আবার নতুন কি দেখবো?? সে তো যত বার বেলপাহাড়ী গেছি, প্রাণ ভরেই দেখেছি। এ আবার নতুন কি!! এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে বলি -
হ্যাঁ, আবার বেলপাহাড়ী। বেলপাহাড়ী মানে শুধু ঘাগরা, তারাফেনী ব্যারেজ, খান্দারানী জলাধার, লালজল গুহা, কাঁকড়াঝোড় জঙ্গল, ময়ূরঝর্ণা সানসেট পয়েন্ট, কানাইসর পাহাড়, গাড়রাসিনি আশ্রম, ঢাঙ্গিকুসুম জলপ্রপাত বা কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়। কেন নয়, সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া ভালো।
আমরা পূর্ব ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস কারী নাগরিক। আপনি এমন কোন পর্যটন কেন্দ্র বা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র এর নাম বলতে পারবেন যেখানে আদিম মানুষের বসবাস ছিলো? আদিম মানুষ, মানে সেই আদিম যুগের মানুষ, যে যুগে মানুষ বসবাস করত গাছের কুঠুরিতে, কিংবা দুর্গম পাহাড়ি গুহার ভিতর!! পাথরের তৈরী অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহার করত হিংস্র বন্যজন্তুর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য! সেই আদি প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ, নব্য প্রস্তর যুগ থেকে ধীরে ধীরে তাম্র যুগ, লৌহ যুগ থেকে মধ্য যুগের বিবর্তন হয়েছে, এমন পর্যটন কেন্দ্র এর কত গুলো নাম আপনার জানা আছে? যদি জানা না থাকে,তবে জেনে রাখুন, সেই জায়গাটির নাম ডুলুং-তারাফেনী-কাঁসাই নদী বিধৌত 'মানব সভ্যতার আদি ভূমি জঙ্গলমহল' এর প্রাণ কেন্দ্র এই বেলপাহাড়ী। বেলপাহাড়ীর চাতন পাহাড়, গাড়রাসিনি পাহাড়, লালজল পাহাড়, বরহাপালের রাজারানী পাহাড়ের পাথরের গুহাগুলো সেই আদিম যুগে গুহাবাসী মানুষের পরিত্যক্ত আবাস স্থল। পৃথিবীর যে সব অঞ্চলকে কেন্দ্র করে মানুষ প্রথম তামা ও লোহার ব্যবহার শিখেছে, সেই সব অঞ্চলের অন্যতম এই বেলপাহাড়ী। বেলপাহাড়ী
থেকে মাত্র ২-৩ কিমি দূরে অবস্থিত 'আস্তাজুড়ি' গ্রাম ভারত বর্ষের অন্যতম প্রাচীনতম 'ঐতিহাসিক গ্রাম (Historical Village)'। 'ঐতিহাসিক গ্রাম' বলা হয়, কারণ গুহা জীবন ও বন্য জীবন ছেড়ে মানুষ নদী কে কেন্দ্র করে গ্রাম পত্তন করে বসবাস শুরু করে তারাফেনী নদীর তীরবর্তী বর্তমানের এই 'আস্তাজুড়ি' নামক গ্রামের চারপাশেই। সমগ্র ভারত বর্ষের মধ্যে প্রথম যে প্রাচীনতম তামার তৈরি কুঠার আবিষ্কৃত হয়েছে, সেই কুঠার টি পাওয়া গিয়েছিলো এই বেলপাহাড়ী'র 'তামাজুড়ি' গ্রাম থেকেই। প্রাচীন যুগের এইসব স্মৃতি ছাড়াও বৃটিশ শাসনের ভুরি ভুরি নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বেলপাহাড়ী জুড়ে। তাই বেলপাহাড়ীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রকৃতিও বেলপাহাড়ীকে প্রাণভরে সাজিয়েছে তার অলঙ্কার দিয়ে। বেলপাহাড়ী হল ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন। এখানে আমরা যেমন পাহাড়, জঙ্গল, জংলি নদী, বড় জলাধার, পাহাড়ি ঝর্ণা দেখতে পাই, আবার অন্যদিকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন, বৃটিশ শাসনের নিদর্শনও দেখতে পাই। আজ আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর বেলপাহাড়ীর এমন কিছু নতুন ভ্রমণ কেন্দ্রের সন্ধান দেব, যে জায়গাগুলো এখনও পর্যন্ত বাঙালীর ভ্রমণ মানচিত্রে জায়গা পায়নি। তথাকথিত পর্যটকরা এখনও অবধি এই জায়গা গুলোতে ভ্রমণ করেননি। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় খুব অল্পসংখ্যক মানুষই এই জায়গাগুলি দেখেছেন বা খুঁজে বের করেছেন। শাল, মহুয়া, কেন্দু, পলাশ,আসন, ধ, বাদর-পিছড়া, গলগলি গাছ এর জঙ্গল; জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথ, পথের চড়াই উৎরাই, তার সঙ্গে প্রাকৃতিক শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আসুন সেই জায়গাগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই :
# চাতন ডুংরি সানসেট ভিউ পয়েন্ট #
এই জায়গাটি বেলপাহাড়ী থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৬ মিটার উচ্চতায়। সরু ফিতার মত বন্য রাস্তা চলে গেছে একেবারে পাহাড়ের মাথায়। বোল্ডার পাথরে মোড়া এই পাহাড়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের দৃশ্য অনবদ্য। পাহাড়ের মাথায় বোল্ডার চাতালের উপর দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে আপনার মনেই হবেনা আপনি মেদিনীপুর জেলা তথা অধুনা ঝাড়গ্রাম জেলার কোন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। স্তরে স্তরে পাহাড়শ্রেণী দেখতে পাবেন। পাহাড়-সমতলের এক অদ্ভুত মিশ্রন চোখে পড়বে। পাহাড়ের ওপর থেকে রৌদ্রছায়ার খেলাও দেখতে পাবেন। একটা স্বপ্নীল দৃশ্য আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, যা দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। শেষ বিকেলে পশ্চিম দিকের পাহাড়ের কোলে সূর্যের হারিয়ে যাওয়া আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
✓✓কিভাবে যাবেন : ট্রেন/বাস/ছোটগাড়ী সহযোগে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে যান। ওখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ৩৮ কিমি দূরে বেলপাহাড়ী চলে যান। অথবা নিজের গাড়ি করে সরাসরি বেলপাহাড়ী পৌঁছে যান। বেলপাহাড়ী পৌঁছে "কাঁচালঙ্কা রেস্টুরেন্টে" টিফিন করে নিতে পারেন অথবা দুপুরের খাবার অর্ডার দিয়ে যেতে পারেন। এরপর বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা ধরুন। পথেই ডানদিকে কোদপুড়া আদিবাসী মিশন হাইস্কুল পড়বে। ওখানে গাড়ি রেখে স্কুলের পরেই পিচরাস্তা ছেড়ে ডানদিকে জংলি রাস্তা চলে গেছে। গুগল ম্যাপ অন করে জংলি রাস্তা ধরে মাত্র ৫০০ মিটার এগিয়ে একেবারে পৌঁছে যান চাতন ডুংরির মাথায়।
✓✓Google map :
Chatan doongri sunset view point
https://goo.gl/maps/2hvTCawRSCEkBcaD6
# লাট্টু পাহাড় #
এই জায়গাটি বেলপাহাড়ী থেকে মাত্র ৩.৮ কিমি দূরে। ছোট্ট পাহাড়। এই পাহাড়ে শিশু থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ সকলেই চড়তে পারবে। বেলপাহাড়ীর অন্যান্য পয়েন্টগুলোর মত একদমই দুর্গম নয় এর রাস্তা। লাট্টু পাহাড়ের মাথা থেকে ৩৬০° ভিউ পাওয়া যায়। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি কানাইসর পাহাড়, গজডুংরি, চাতন ডুংরি, চিতি পাহাড়, জঙ্গলচৌকি শালের পাহাড়, হাঁসা পাহাড় (শ্বেত পাথরের পাহাড়), গাড়রাসিনি পাহাড়, ঠাকুরানপাহাড়ী, গাড়পাহাড় তথা বেলপাহাড়ীর সমতল ভূমির গ্রাম গুলোর অপরূপ শোভা দেখতে পাবেন। লাট্টু পাহাড়ের মাথা চ্যাপ্টা হওয়ার দরুন অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়রা এখানে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারেন। সেটা এক অসাধারণ অনুভূতি উপলব্ধি করবেন।
✓✓কিভাবে যাবেন : উল্লিখিত ভাবে বেলপাহাড়ী পৌঁছে যান। তারপর বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা ধরুন। বেলপাহাড়ী থেকে ৩.৫ কিমি এগোনোর পরেই রাস্তার ধারে গাড়ি রেখে দিন। এরপর গুগল ম্যাপ অন করে বামদিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে মাত্র ৩০০ মিটার এগিয়ে পৌঁছে যান লাট্টু পাহাড়ের মাথায়।
✓✓Google map :
লাট্টু হিল ভিউ পয়েন্ট
https://maps.app.goo.gl/uk2nZxAZUnTZTb188
# বোদাডিহি ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট #
বেলপাহাড়ীতে এসে পাহাড় ও পাহাড়ের ঢেউ খেলানো উপত্যকার মজা নেওয়ার জন্য এই ভিউ পয়েন্ট এর জুড়ি মেলা ভার। কেননা চার পাশের ঢেউ খেলানো পাহাড়ী উপত্যকা আপনার দুচোখকে মোহিত করে তুলবে। পাহাড়ের ঢালে সবুজ উপত্যকা আপনাকে চা-বাগানের কথা মনে করিয়ে দেবে, উত্তরবঙ্গের অনুভূতি এনে দেবে। এর প্রাকৃতিক শোভা অনবদ্য। এই জায়গাটি বেলপাহাড়ী থেকে মাত্র ৪.৭ কিমি দূরে। খুব সহজেই পৌঁছানো যায়।
✓✓কিভাবে যাবেন : উল্লিখিত ভাবে বেলপাহাড়ী পৌঁছে যান। তারপর বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা ধরুন। কোদপুড়া হাইস্কুল পেরিয়ে ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস থেকে বামদিকের রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে নিন। ৫০০ মিটার এগিয়ে গাড়ি রেখে ম্যাপ অনুযায়ী বামদিকে সোজা বোদাডিহি ভ্যালি ভিউ পয়েন্টে উঠে যান ।
✓✓Google map :
Bodadihi valley view point
https://maps.app.goo.gl/M472W5AjX2tBFUHM8
# পবন পাহাড় (চিতি পাহাড়) #
পবন পাহাড়ের অবস্থান বালিচুয়া হাইস্কুলের ঠিক পেছনেই। বেলপাহাড়ী থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৭.২ কিমি। চিতি পাহাড়শ্রেণীর সর্বোচ্চ চূড়া এটাই, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০১ মিটার উচ্চতায়। দূর থেকে অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এই পাহাড় দেখলে মনে হবে অরণ্য দেবের সেই বিখ্যাত 'খুলি পাহাড়'। পাহাড়ের উপরি ভাগে, সেই রহস্যময় দ্বীপে খাড়া হয়ে থাকা পাথর গুলোর মতো হালকা বাদামি শ্বেত পাথর গুলো, এক কথায় অবর্ণনীয়। বলা যায় এই পবন পাহাড় বেলপাহাড়ী র ' রক গার্ডেন'। চার দিকের দিগন্ত জোড়া বিভিন্ন পাহাড়, উপত্যকা ও ঝিলগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। পাহাড়ের মাথা থেকে বালিচুয়া হাইস্কুলটিও অনবদ্য দেখতে লাগে। পাহাড়ে ওঠার একদিকের রাস্তাটি সহজ হলেও উল্টোদিকটা খুবই দুর্গম। যারা ছোটোখাটো রকিং ট্রেক করে পাহাড়ে উঠতে আগ্রহী, তারা অবশ্যই এই জায়গাটি ঘুরে যেতে পারেন। ভোরে পৌঁছে পবন পাহাড়ের মাথা থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। মেঘ ও কুয়াশার স্পর্শ আপনাকে গরমের মধ্যেও শীতের অনুভূতি এনে দেবে।
✓✓কিভাবে যাবেন : উল্লিখিত ভাবে বেলপাহাড়ী পৌঁছে যান। তারপর বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা ধরুন। ওই রাস্তায় ৬.৫ কিমি এগোনোর পর শিমুলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে বামদিকে কংক্রিটের রাস্তা ধরে বালিচুয়া হাইস্কুল পৌঁছে যান। স্কুলের পেছনেই পবন পাহাড়। ওখানে গাড়ি রেখে ট্রেক করে পাহাড়ে উঠে যান।
✓✓Google map :
Paban pahar view point
https://goo.gl/maps/xDEjWYbnLsCSz1fL7
# আদিম মানুষের গুহা(চাতন ডুংরি) #
পূর্ব ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের যে সব অঞ্চলে প্রস্তর যুগের আদিম মানুষের বসবাসের নিদর্শন ও গুহা রয়েছে তার মধ্যে বেলপাহাড়ী অন্যতম। লালজল গুহা ও গাড়রাসিনি গুহার কথা আমরা অনেকেই জানি এবং দেখেছি। কিন্তু এই গুহাগুলোর অন্যতম ছিলো চাতন ডুংরি তে অবস্থিত গুহাগুলি। গুহাগুলি বললাম এই কারণে, এখানে অনেকগুলো গুহা ছিলো। কালের বিবর্তনে বর্তমানে মাত্র দুটি ভগ্নপ্রায় গুহা টিকে আছে। একটি ডোমগড় গ্রামের কাছে। অপরটি বোদাদিহি গ্রামের কাছে, চাতন ডুংরিতে। নীচের ছবিগুলো উপরে বর্ণিত চাতন ডুংরির ঠিক নীচেই অবস্থিত। এই গুহাগুলো দক্ষিণ মুখী। শীতে উত্তুরে ঠান্ডা হাওয়া থেকে রক্ষা পেতে, এই গুহাগুলো পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে তৈরি করা হয়েছিল। এই গুহাগুলোতে তে বসবাসকারী আদিম মানুষের জলের মূল উৎস ছিলো নিকটবর্তী 'চুয়া' বা পাহাড় থেকে চোয়ানো জলের 'জলাশয়'। বলা হয়ে থাকে এখানে নয় টি চুয়া ছিলো।স্থানীয় ভাষায় 'ন'টা চুয়া' । এর থেকে স্থানীয় একটি জনপদের নাম হয়েছে 'নটাচুয়া'। কথিত আছে, 'চুয়াড় বিদ্রোহে'র সময় 'বিপ্লবী দুর্জন সিং' ব্রিটিশদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই এই গুহার অদূরে বোদাডিহি মোড়ে 'বিপ্লবী দুর্জন সিং' এর একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো রয়েছে। এই গুহায় গিয়ে আপনিও ঘড়ির কাঁটা পেছনে ঘুরিয়ে আদিম সভ্যতার কিছুটা স্বাদ নিতে পারেন।
✓✓কিভাবে যাবেন : উল্লিখিত ভাবে বেলপাহাড়ী পেরিয়ে কোদপুড়া আদিবাসী মিশন হাইস্কুলে পৌঁছে যান। স্কুল থেকে পিচ রাস্তা ধরে মাত্র ৫০০ মিটার এগোলেই বোদাডিহি মোড়। ওখানে গাড়ি রেখে ডানদিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে উঠে যান গুহাতে। যদিও গুহাটি উপরে বর্ণিত চাতন ডুংরির ঠিক নীচেই অবস্থিত, কিন্তু গুহায় পৌঁছানোর রাস্তা অন্য দিক দিয়ে।
✓✓Google map :
Chatan Primitive caves
https://goo.gl/maps/2hvTCawRSCEkBcaD6
# গজপাথর সরোবর #
আপনারা নিশ্চয়ই এতদিনে বেলপাহাড়ীর অন্যতম ভ্রমণ কেন্দ্র খাঁদারানী জলাধার বা কেটকি ঝর্ণার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছেন, সে সশরীরে হোক বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। আসুন আজ খাঁদারানীর মতোই বড় আর একটি জলাধারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। এই জলাধার টির নাম গজপাথর সরোবর। এই স্থানটি বেলপাহাড়ী থেকে ৮ কিমির মধ্যে। এর স্বচ্ছ জলে মেঘ-পাহাড়ের প্রতিবিম্ব, জীবন্ত ওয়ালপেপার বলে মনে হবে। মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম দেওয়াল তুলে এর জল আটকে রাখা হয়নি। এই জলাধারটি পুরোটাই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী। পাহাড় এবং অন্যান্য উঁচু জমির জল গড়িয়ে এসে এটি প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়েছে। গজপাথর ও তুলসীবনি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এটির অবস্থান। শুধু পাহাড় বা আদিম গুহা নয়, এই সরোবরটিও আপনার ভ্রমণের সঙ্গী হতে পারে।
✓✓কিভাবে যাবেন : উল্লিখিত ভাবে বেলপাহাড়ী পৌঁছে যান। তারপর বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা ধরুন। ওই রাস্তা ধরে বালিচুয়া পর্যন্ত যান। বালিচুয়া থেকে ডানদিকে গজপাথর হয়ে পৌঁছে যান সরোবরের পাড়ে।
✓✓Google map :
Gajpathar Sarobor গজপাথর সরোবর
https://maps.app.goo.gl/WjRRqxvtF7RrZqgV9
উপরে যে কটা ভ্রমণ স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো সবই বেলপাহাড়ী-কাঁকড়াঝোড় রাস্তা দিয়েই যাওয়া যায় এবং সবগুলো একই এলাকাতে পড়ে। প্রতিটি জায়গা বেলপাহাড়ী থেকে ৮ কিলোমিটারের মধ্যেই। জায়গাগুলো পাশাপাশি হওয়ার কারণে আপনি একই সফরে সবকটা জায়গাই কভার করে নিতে পারবেন। যদি গাইড এর প্রয়োজন হয় তবে যোগাযোগ করতে পারেন লোকাল গাইড, সৌরভ দাস +919800893370। আরেকটা অনুরোধ রইল, দয়া করে চড়ুইভাতি বা পার্টি করে এই জায়গা গুলির প্রাকৃতিক শোভা নষ্ট করবেন না। যদি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, তাহলে আসুন, নতুন ভ্রমণ কেন্দ্র গুলি ঘুরুন এবং প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করুন।
আজ এই পর্যন্ত, পরের পর্বে আরও কিছু নতুন অচেনা জায়গার সন্ধান নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।
বি:দ্র: কারো আরও বিশদে কিছু জানার থাকলে নীচের পোস্টে কমেন্ট করবেন আমি রিপ্লাই দিয়ে দেব।
কলমে - অভিজিৎ কুন্ডু
তথ্য ঋণ - হপন মাঝি (ডঃ মনোরঞ্জন মাহাত)
তথ্য ঋণ - বিধান দেবনাথ
ছবি - মুঠোফোন (নিজস্ব)
Comments